April 2018
২০ রাকাত তারাবিহ ৪ ইমামের জীবনী ৭৩ দল আমল আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা আসমাউন নবী (ﷺ) আহলুস-সুন্নাহ আহলে কুরআন ফির্কা ইনসান ইবনে তাইমিয়্যা ইমান ইলমে গায়েব ইসলামের ভিত্তি উসীলা এপ্সঃ আল আউলিয়া ওহাবী কবর ও মাযার জিয়ারত কিতাবঃ ৪০ হাদিস মুখস্ত রাখার ফজিলত কিতাবঃ আকাইদে আহলুস সুন্নাহ কিতাবঃ ইসলামের মূলধারা [মঈনুদ্দীন আশরাফী] কিতাবঃ উচ্চস্বরে জিকিরের বিধান [ইমাম সুয়ূতী] কিতাবঃ নবীগণ (আঃ) স্বশরীরে জীবিত - ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর [হাদ্দাদ দামেশকী] কিতাবঃ শাহ নেয়ামাতুল্লাহ (রহঃ)'র ভবিষ্যদ্বাণী কিতাবঃ সালাফীদের জবাবে কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ [ইকরাম উদ্দীন] কিতাবুল ফিতান কিয়াম ক্বদরিয়া ফির্কা খারেজী জামাতে ইসলামের ভ্রান্ত আকিদা জাহমীয়া ফির্কা তরিকত তাবলীগ দাজ্জাল দুরুদ দেওবন্দী আক্বিদা দোয়া কবুলের নিয়ম নজদী নারী নিয়্যত বাতিল ফির্কা বায়আত গ্রহণ মওদুদী মতবাদ মক্কা মদিনার ফজিলত মাক্বামে মাহমুদ মাযহাব মাযহাবের তাকলিদ মাযার সম্পর্কিত মিলাদুন্নবী (ﷺ) মু'মিন মুজরিয়া ফির্কা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা ইমানদার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বন্টনকারী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেনজীর-বেমিসাল লেখক ফোরাম শবে বরাত শানে আউলিয়া শানে আহলে বাইয়াত শানে মোস্তফা (ﷺ) শানে সাহাবায়ে কেরাম শাফায়াত শিয়া শিরিক সদকায়ে জারিয়াহ সালাত সৌদি আরবের ইতিহাস হক বাতিলের পরিচয় হাদিস প্রচারে সতর্কতা

06:39

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা
(http://goo.gl/naM9eH)
লেখকঃ অধ্যক্ষ আব্দুল করিম সিরাজনগরী
কৃতজ্ঞতায় : (Dr. Abdul Baten Miaji-Apps Developer)
বইয়ের এপ্সগুলো এখানে থেকে ডাউনলোড করুনঃ
https://play.google.com/store/apps/dev?id=5204491413792621474
Apps থেকে সংকলকঃ (Masum Billah Sunny)
_____________________________________
কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১) দরূদ পাঠের হাকিকত ও নূরানিয়ত

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ২) নামাযের ভিতরে সালাত-সালাম পাঠ করার হেকমত

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৩) যে সকল দরূদশরীফ পাঠ করা সর্বোত্তম

‘কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৪) শিফাহুস শিকামে’ উল্লেখিত কতিপয় দরূদশরীফ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৫) আযানের পূর্বাপর দরূদশরীফ পাঠ করার বিধান

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৬) দরূদে জুমুয়া / দরূদে তাজ / দরূদে তুনাজ্জিনা/ দরূদে নূরী / পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর অজিফা পাঠ, বিশেষ করে এশার নামাযের পর মদিনাশরীফের দিকে মুখ করে তা’জিমের সাথে নবীকে হাজির নাজির ঈমান রেখে ১০০ বার দরূদশরীফ পাঠ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৭) যে দরূদশরীফের আমলে নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বেহেশতে অবস্থান করা সম্ভব

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৮) যেসব ক্ষেত্রে সালাত-সালাম পাঠ করা বরকতময়

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ৯) যেসব ক্ষেত্রে দরূদ পাঠ করা মাকরূহ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১০) জরুরি আমলিয়াত

তওবায়ে নাছুহার গুরুত্ব

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১১) ফরজ নামাযের পর বিশেষ আমল

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১২) আয়াতুল কুরছির ফজিলত

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৩) ইস্তেগফার পাঠ করার ফজিলত / সত্তরহাজার ফেরেশতার ইস্তেগফার লাভ করার আমল / অল্প সময়ে চল্লিশ লক্ষ নেকি অর্জন / বালা মসিবত দূর ও মকসুদ পূর্ণ হওয়ার আমল / সর্বদা পরিপূর্ণ হেফাজতের দোয়া / রোগি দেখার দোয়া

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৪) আল্লাহকে রাজি ও জান্নাত লাভ করার দোয়া / ইবাদতের হক আদায়ের দোয়া / নিয়মিত অজিফা অনাদায়ে ক্ষতিপূরণের দোয়া / শয়তান জ্বিন ও সর্বপ্রকার আফাত থেকে নিরাপত্তার দোয়া / স্ত্রী সহবাসের দোয়া / বিছানায় যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠার দোয়া / ভয়ানক স্বপ্নরোধের তদবির / সুন্নত মোতাবেক নেকআমল করা অনস্বীকার্য

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৫) জুতাসহ বিভিন্ন বস্ত্রাদি পরিধানের সুন্নত তরিকা/ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার বিতরণের সুন্নত তরিকা / পানাহার করার সুন্নত তরিকা ও দোয়া পাঠ করা / খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সুন্নত তরিকা/ নখ কাটার ব্যাপারে সতর্কতা / কল্পনাতীত রিযিক পাওয়ার দোয়া

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৬) প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া / জান্নাত লাভের উপায় / অধিক সওয়াবের ভাণ্ডার দেখাল আমল / চিন্তা-ভাবনা দুঃখ-কষ্ট দূর করার আমল / ইসমে গিয়াছ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৭) আসহাবে কাহাফ / আয়ু বৃদ্ধির অজিফা / শত্রুকে বন্ধু বানানোর পরীক্ষিত আমল / বিপদ মুক্তির আমল / মুকাদ্দামায় জয়ি হওয়ার দোয়া / রিযিব বৃদ্ধির দোয়া

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৮) বিবিধ কর্মকাণ্ড/ ইসমে আ’জম / দোয়ায়ে না’দে আলী ও তার সনদ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ১৯) বিবিধ কর্মকাণ্ড/ ইসমে আ’জম / দোয়ায়ে না’দে আলী ও তার সনদ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ২০) খতমে গাউছিয়াশরীফ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ২১) কাসিদায়ে গাউছিয়াশরীফ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ২২) শাজরা শরীফ

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (পর্ব ২৩) মোরাকাবা

কিতাবঃ আনওয়ারে মদিনা (শেষ পর্ব ২৪) আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস

পোস্টগুলো পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ

http://goo.gl/naM9eH

06:17
দরূদ পাঠের হাকিকত ও নূরানিয়ত
আল্লাহর    হাবিব     সাল্লাল্লাহু    আলাইহি      ওয়াসাল্লামকে  হাজির   ও  নাজির   বিশ্বাস    রেখে  নিয়মিত  দরূদশরীফ পাঠ    করার    অভ্যাস    করে    নেয়া    এবং    সাথে    সাথে  মাহবুবে    মতলক    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লামের  প্রতি   ভক্তি  ভরে  সালাম পেশ করার মাধ্যমেই   মদিনা মুনাওয়ারার নূর লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করার রাস্তা উম্মুক্ত করে নেওয়া সম্ভব।
একাদশ  শতাব্দীর মুজাদ্দিদ  আল্লামা   শেখ আব্দুল  হক  মুহাদ্দিসে  দেহলভী   আলাইহির   রহমত   তদীয়   مدارج  النبوة  ‘মাদারিজুন  নবুয়ত’  নামক  কিতাবের  ১/৩৮৩  পৃষ্ঠায়   দরূদশরীফের   ফজিলত   সম্পর্কে   উল্লেখ   করে  বলেন,
و شيخ اجل واكرم قطب الوقت عبد الوهاب متقى رحمة الله  عليه  ونفعنا  ببركاته  وبركات   علومه   میفرمود  باید .... وآخر  بعد    خوض وغوص درین  بحارنامتناھی  محروم ومایوس آمدن چہ صورت دارد
ভাবার্থ:    শায়খে    আজল    ও    আকরম    কুতবে    জমান  আব্দুল   ওয়াহহাব   মুত্তাকী   আলাইহির   রহমত   বলেন,  ‘নবী    করিম    সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লামার    প্রতি দরূদশরীফ প্রেরণের সময়ে এ খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’য়ালার রহমত ও বরকতের  সমুদ্রের   কোন   এক সমুদ্রে ডুব দেওয়া হচ্ছে। 
اللهم  ‘আল্লাহুম্মা’   বলার  সময়    মনে  করতে  হবে   যে, রহমতে  এলাহির   সমুদ্রে   প্রবেশ   করা     হলো।  হযরত হাসান   বসরি  রাদিয়াল্লাহু  আনহু    বলেন,  নবী  প্রেমিক  বান্দা   যখন   اللهم   ‘আল্লাহুম্মা’   বলে,   তখন   সে   যেন  আল্লাহ তা’য়ালার   সকল নাম স্মরণ করল।   আর  যখন صل       على       سيدنا      محمد      ‘সাল্লি        আলা      সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন’   বলে,   তখন  সে  যেন    নূর  নবী   সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের   ফজল  ও  করমের সমুদ্রে  ডুব দিল।
আর যখন  وعلى اله واصحابه  ‘ওয়া    আ’লা আলীহি ওয়া আসহাবিহী’     বলে     তখন     সে     যেন     নবী     সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লামের  ফাজাইল  ও   কামালাত   তথা  তাঁর মহান মর্যাদার সমুদ্রে ডুব দিল।
অতঃপর বলেন, একজন  নবী   প্রেমিক   সুন্নি  আক্বীদায় বিশ্বাসী      মুসলমান       আল্লাহ     তা’য়ালার     এ      অন্তহীন রহমতের   সমুদ্রে   এরূপ    ডুব   দেওয়ার   পর    আল্লাহর  রহমত  ও   মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত ও  হতাশ  হওয়ার  কোন কারণই থাকতে পারে না।’
بسنن  ابى   داؤد  আবু   দাউদ    শরীফের   প্রথম   জিলদের ১৫৭     পৃষ্ঠায়    উল্লেখ    রয়েছে,    হযরত     আবু    হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু    আনহু    থেকে     বর্ণিত,    নূরনবী     সাল্লাল্লাহু আলাইহি    ওয়াসাল্লামার     নূরানী     ফরমান,    যে    ব্যক্তি আমাদের আহলে  বাইতের প্রতি দরূদশরীফ পাঠ করে পূর্ণ  ওজনে  নেকি পরিমিত করায়ে খুশি   হতে  চায়, সে যেন এভাবে দরূদশরীফ পাঠ করতে থাকে,
اللهم   صل  على  محمد    النبى   وازواجه  امهات  المؤمنين وذريته واهل بيته كما صليت على ال ابراهيم انك  حميد مجيد ( مرقاة الصعود الى سنن ابى داؤد ص ۱/۳۵۷)
নবী     প্রেমিক   সুন্নি  আক্বীদায়   বিশ্বাসী  পাঠকবৃন্দ!  الله  جميل   ويحب   الجمال   আল্লাহ   আজ্জা   ওয়াজাল্লা   সুন্দর  এবং   তিনি    সুন্দরকে    মহব্বত     করেন।   এজন্য    তাঁর হাবিব আমাদের আকা ও মাওলা  মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু       আলাইহি        ওয়াসাল্লামকে       সৃষ্টির       মধ্যে  অতুলনীয়  সুন্দর  ও  মর্যাদাসম্পন্ন  করে  সর্বপ্রথম  সৃষ্টি  করেছেন।
এ প্রেক্ষাপটে হযরত ফারুকে আ’জম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর  বংশের অমূল্যরত্ন বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস   শাহ ওলী উল্লাহ   আলাইহির  রহমত  তদীয়  الدر   الثمين  ‘দুররুস  সামিন’ নামক   কিতাবের  দশম    নাম্বার হাদিসে উল্লেখ করেন,  তিনি (শাহ  ওলি উল্লাহ) বলেন, আমার  শ্রদ্ধেয় পিতা শাহ   আব্দুর রহিম মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত    আমাকে    অবগত     করিয়েছেন,   তিনি   বলেন,  আমার      নিকট    আল্লাহর    হাবিব    সাল্লাল্লাহু     আলাইহি ওয়াসাল্লামের একখানা হাদিসশরীফ পৌঁছেছে। হাবিবে খোদা নিজেই এরশাদ করেন, انا املح واخى يوسف اصبح অর্থাৎ   ‘আমি   লাল   ও   হলুদ    বর্ণ   এবং   আমার   ভাই  ইউসুফ আলাইহিস সালাম উজ্জ্বল বা ফর্সা।’
তিনি     (শাহ     আব্দুর      রহিম)    বলেন,    আমি    আল্লাহর হাবিবের  জবান  মোবারক  থেকে  ইহা  শ্রবণ  করে  এর  সঠিক    ভাবার্থ   নির্ণয়   করতে    অপারগ    হয়ে    গেলাম। এজন্য যে, ملاحت   ‘মালাহাত’ বা লাল    ও  হলুদ বর্ণ।  صباحت    ‘ছাবাহাত’     বা     উজ্জ্বল     (ফর্সা)    বর্ণ    থেকে  প্রেমিকের  জন্য   মালাহাত   অধিক   টেনশন   ও  আশক্ত হওয়ার     কারণ।    অথচ    হাদিসশরীফ    দ্বারা    প্রমাণিত  ইউসুফ  আলাইহিস  সালামের  সৌন্দর্য  দেখে  মিশরের  কতেক      মহিলা   তাদের   হাত   কেটে   ফেলেছিল    এবং কতেক লোক তাঁকে দেখে মৃত্যুবরণও করছিল।
অপরদিকে       আমাদের         নবী         সাল্লাল্লাহু       আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার পর এমন মর্মান্তিক ঘটনার কোন রেওয়ায়েত পাওয়া যায় নাই।
অতঃপর   তিনি   (আমার   শ্রদ্ধেয়   পিতা)   বলেন,   আমি  হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখে এর সঠিক ভাবার্থ জানতে আরজি  পেশ  করলে,  আল্লাহর হাবিব উত্তরে বলেন,
(فقال جمالى مستور عن اعين الناس  غيرة  من الله  عز وجل   ولو  ظهر  لفعل  الناس  اكثر   مما   فعلوا   حين  راو يوسف)
ভাবার্থ:  আল্লাহতা’য়ালা   আমার  সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি  থেকে     সূক্ষ্ম    মর্যাদা     বোধের    কারণে       গোপন     করে রেখেছেন এবং  যদি  আমার  এ নূর  বা  সৌন্দর্য প্রকাশ  হয়ে  যেত,   তবে  মানুষের  অবস্থা  ইউসুফ     আলাইহিস সালামকে   দেখে    যা    হয়েছিল,   তার   চেয়েও    ভয়াবহ হতো।  অর্থাৎ   হুজুরের  সৌন্দর্য   দেখে  অগণিত   মানুষ প্রাণ হারাতো।’
এ  জন্যইতো  চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম  আহমদ  রেজাখাঁন    বেরেলী    আলাইহির   রহমত কতইনা সুন্দর বর্ণনা করেছেন,
حسن یوسف پہ کٹیں مصر میں انگشت زنان
سر کٹا تے ہیں ترے نام پہ مردان عرب
আ’লা     হযরত    বলেন,     মিশরের      মহিলাগণ     হযরত ইউসুফ    আলাইহিস    সালামের      সৌন্দর্য    দেখে     হাত কেটেছিল।    ইয়া   রাসূলাল্লাহ   আপনার    পবিত্র   নামের  উপরে   আরবের  জলিলুল  কদর   সাহাবায়ে  কেরামগণ  নিজের মাথা কাটিয়ে দিয়েছেন।
আহ! আমাদের  নবী যে কত  সুন্দর তা  একমাত্র মহান আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লাই অধিক জানেন।
সেই   নবীর   প্রতি    প্রাণঢালা  সালাত  ও   সালাম   প্রেরণ করতে থাকুন। যেন মরণের বিছানায় আল্লাহর হাবিবের নূরানী  চেহারা মোবারক   দুনয়নের  সামনে ভেসে  উঠে এবং  হাবিবে খোদার এ নূরানী চেহারা মোবারক দেখে দেখে যেন ফানাফির রাসূলের দর্জায় পৌঁছে বেহুশ হয়ে সাকরাতের     মউত     যেন       টেরই     না      পাওয়া     যায়। আমাদের জবান  দ্বারা  যেন শেষ ঈমানী  কালেমা  জারি হয়ে পড়ে لا اله الا الله محمد رسول الله এটাই আশেকে জামালে      মোস্তাফা      তথা     নবীজির     সৌন্দর্য     দেখার প্রত্যাশীদের একমাত্র কামনা।
আল্লামা   ইবনে  হজর  মক্বী  আলাইহির  রহমত      তদীয় ‘আদ   দুররূল   মানদুদ’   নামক   কিতাবের   ২২   পৃষ্ঠায়  দরূদশরীফের    যে    ফজিলতের    বর্ণনা    দিয়েছেন      তা নিুরূপ,
الامر   الثالث   :  الشفقة   على   الامة  بتحريضهم  على   ما  هو حسنة    فى  حقهم  وقربة    لهم-   بل  الصلوة    ليست  حسنة واحدة بل قربات؟
۱) اذ فيها : تجديد الايمان بالله تعالى اولا
۲) ثم برسوله صلى الله عليه وسلم ثانيا
۳) ثم بتعظيمه ثالثا
٤) ثم بالعناية بطلب الكرامات له رابعا
۵)    ثم    تجديد     الايمان     باليوم     الاخر     وانواع    كراماته خامسا
٦) ثم بذكر اله سادسا وعند ذكر الصالحين تنزل الرحمة
۷) ثم بتعظيم الله بسبب نسبة اليه تعالى سابعا
٨) ثم باظهار المودة لهم ثامنا ولم  يسال صلى الله عليه وسلم من امته اجرا الا المودة فى القربى
٩)   ثم  بالاجتهاد  والتضرع  فى  الدعاء  تاسعا  والدعاء   مخ العبادة
۱۰) ثم بالاعتراف عاشرا بان الامر كله اليه-
অর্থাৎ    ‘তৃতীয়    বিষয়,    আল্লাহর    হাবিবের    উম্মতকে  দরূদশরীফ পাঠের  প্রতি উৎসাহ প্রদান করা মুলত নূর নবী    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   উম্মতের     প্রতি সদয় হওয়া, এ সদয়তা হচ্ছে তাদের প্রাপ্য নেকি লাভ এবং তাদের নৈকট্য অর্জন। যেহেতু দরূদশরীফ কেবল একটিমাত্র     নেকআমলের   মধ্যেই    সীমাবদ্ধ   নয়   বরং এতে অনেক নৈকট্য বিদ্যমান রয়েছে, তন্মধ্যে,
১. আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তাসদিকে ঈমান বা ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
২.    দ্বিতীয়টি   হচ্ছে   তাঁর    রাসূল      সাল্লাল্লাহু   আলাইহি  ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
৩.    তৃতীয়টি   হচ্ছে,      তাঁর   প্রতি    তা’জিম   বা    সম্মান  প্রদর্শন।
৪.  চতুর্থটি  হলো  দরূদশরীফ  পাঠ দ্বারা  মূলত  হাবিবে খোদা  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লামের  কারামত   বা অধিক সুমহান মর্যাদা লাভের   জন্য   আল্লাহর   দরবারে প্রার্থনা করা।
৫.   পঞ্চমটি   হচ্ছে  পরকালের  প্রতি  ঈমানকে  নবায়ন   করা   এবং    ঐ    দিনের  যাবতীয়  করুণা   লাভের   উপায় হাসিল হওয়া।
৬.      ষষ্ঠটি     হচ্ছে,     আলে       রাসূল     তথা     রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের আলোচনা বা স্মরণ করা। কেননা সালেহীন বা আল্লাহর নেকবান্দাদের স্মরণে  রহমতে খোদাওন্দি  নাজিল হয়ে থাকে।
৭. সপ্তমত আল্লাহর হাবিবের নিসবত বা সম্পর্ক আল্লাহ তা’য়ালার  দিকে   থাকার   কারণে  মূলত   মহান   আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তা’জিম বা সম্মান প্রদর্শন হয়।
৮. অষ্টমত দরূদশরীফ পাঠের বদৌলতে  বান্দার প্রতি আল্লাহ   তা’য়ালা   ও    তাঁর   রাসূল   সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লাম    এর    মুয়াদ্দত  বা   ভালবাসা  প্রকাশ  পেয়ে  থাকে।       কেননা       হুজুরেপাক        সাল্লাল্লাহু         আলাইহি ওয়াসাল্লাম   مودة    فى   القربى     ‘মুয়াদ্দাত     ফিল   কুরবা’  অর্থাৎ   আপনজনদের      প্রতি     ভালবাসা   ব্যতীত   অন্য কোন বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না।
৯.    নবমটি   হচ্ছে,   দোয়াতে   সাধ্যমত    চেষ্টা   করা    ও বিনয়ী   হওয়ার  প্রতি    রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক উৎসাহ  প্রদান। কেননা  দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার বা মগজ।
১০.       দশমটি       হচ্ছে,       হুজুর       সাল্লাল্লাহু       আলাইহি  ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদশরীফ পাঠের মা’রেফত  তথা পরিচিতি    লাভের    উৎসাহ    প্রদান।    মুদ্দাকথা      হলো, ইহকাল       ও      পরকালের       সবকিছুই       তাঁর      (আল্লাহ তা’য়ালার) করুণার অধীনে নিয়োজিত। 

06:16
নামাযের ভিতরে সালাত-সালাম পাঠ করার হেকমত
নামাযে  তাশাহহুদ  পাঠ  করাকালীন  অবস্থায়   আল্লাহর  হাবিবকে     সালাম     ও     দরূদে     ইব্রাহিম     পাঠ     করার  হেকমত।
১.  বিশ্ববিখ্যাত   মুহাদ্দিস   শাহ   ওলী  উল্লাহ  আলাইহির রহমত  তদীয়   حجة   الله    البالغة  নামক   কিতাবের   ২য় জিলদের ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
ثم  اختر   بعده  السلام   على  النبى  تنويها  بذكره  واثباتا  للاقرار برسالته واداء لبعض حقوقه-
অর্থাৎ    তিনি   বলেন,    অতঃপর  (নামাযে  আত্তাহিয়্যাতু পাঠ   করাকালীন   অবস্থায়)   আল্লাহর   হাবিব   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি সালাম পেশ করার বিধান এ জন্য  দেওয়া হয়েছে, যেন   হাবিবে   খোদার   জিকির তা’জিম   বা    সম্মানার্থে   অনুষ্ঠিত     হয়   এবং    নামাযের ভিতরে   সালাম   পেশ   করার   দরুন   তাঁর   রেসালাতের  স্বীকারোক্তি হয়ে যায়। এতে আল্লাহর হাবিবের  কিছুটা  হক   আদায়  হয়ে    যায়।  অর্থাৎ  নামাযী    যে   সত্যিকার হাবিবে খোদার রেসালাতের ঈমান এনেছে তার  প্রমাণ এবং   তার ঈমান যেন কলবে  অঙ্কিত হয়ে   যায়। এতে  হাবিবে খোদার কিছুটা হক আদায় হয়ে যায়।
২.      আল্লামা      ইমাম        গাজ্জালী      আলাইহির      রহমত  এহইয়ায়ে  উলুমিদ্দিন কিতাবের  ১/৯৯   পৃষ্ঠায়  বাতেনি শর্তের বয়ানে উল্লেখ করেন,
‘তোমার   কলব    বা      অন্তরে   নবী   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  এবং  তাঁর  সুরত  মোবারককে  উপস্থিত  জানবে         এবং        বলবে        আস        সালামু        আলাইকা  আইয়ুহান্নাবীউ   ওয়া    রাহমাতুল্লাহহি   ওয়া  বারাকাতুহু’ এমতাবস্থায়  তুমি বিশ্বাস রাখবে  যে তোমার এ সালাম হাবিবে  খোদার  নিকট  পৌঁছার  সাথে  সাথে  তার  পক্ষ  থেকে তোমার কাছে  উত্তম সালামের   জওয়াব আসছে  এবং তুমি এ মহান নেয়ামতের মালিক হয়েছ,
واحضر   فى   قلبك   النبى   صلى   الله   عليه   وسلم   وشخصه  الكريم وقل سلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته ولتصدق املك  فى انه يبلغه ويرد عليك ما هوا وفى منه احياء-
দরূদ-সালাম     পাঠ     করাকালীন     অবস্থায়     এ     ঈমান  রাখবেন যেন হাবিবে খোদা দেখেন ও শুনেন
================== 
এ প্রসঙ্গে আল্লামা  শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির  রহমত   তদীয়   ‘মাদারিজুন  নবুয়ত’  নামক কিতাবের ২/৭৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
ذکر   کن  اورا  ودرود   بفرست  بروی   صلی   اللہ   علیہ   وسلم وباش درحال ذکرگویا حاضراست  پیش تودر حالت حیات ومی    بینی  تو   اورا   متادب  باجلال  وتعظیم  وہمت  وحیا  بدانکہ وے صلی اللہ علیہ وسلم می بیند ومی شنود کلام ترا زیراکہ  وی متصف است بصفات اللہ  تعالی  ایکہ از  صفات الھی آنست کہ انا جلیس من ذکرنی-
ভাবার্থ:   নূর    নবী    সাল্লাল্লাহু   আলাইহি    ওয়াসাল্লামকে স্মরণ  করুন,     তাঁর  প্রতি   দরূদ    পেশ  করুন।  আল্লাহর হাবিবের  জিকির  বা  তাঁর  প্রতি  দরূদ  ও  সালাম  পেশ  করার   সময়     এমনভাবে   অবস্থান   করুন,   যেন     তিনি  আপনার  সামনে  হায়াতে  জিন্দেগিতে  হাজির  আছেন,  আর আপনি তাঁকে দেখছেন। সুতরাং দরূদশরীফ পাঠ  করাকালীন   আল্লাহর    হাবিবকে   সৃষ্টির    মধ্যে    সর্বোচ্চ শানের অধিকারী  ঈমান   রেখে   আদব,  মর্যাদা ও শ্রদ্ধা  অক্ষুন্ন রেখে  ভীত  ও   লজ্জিত থাকুন   এবং এ  আক্বিদা  রাখুন      যে      হুজুর      সাল্লাল্লাহু      আলাইহি      ওয়াসাল্লাম  আপনাকে      দেখছেন,    আপনার     কথাবার্তা    শুনছেন।  কেননা     তিনি   খোদার   গুণাবলীতে    গুণান্বিত।   আল্লাহ তা’য়ালার   একটি   গুণ   হচ্ছে,   আমি   (আল্লাহ)   আমার  জিকিরকারীদের সঙ্গে সহাবস্থান করি।
মুদ্দাকথা হলো আল্লাহর হাবিবের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ     করাকালীন    অবস্থায়     আদবের    সাথে    হাবিবে   খোদার    চেহরায়ে    আনোয়ারের    দিকে    খেয়াল    করে  আদবের   সাথে  বসে অথবা  দাঁড়িয়ে দরূদ ও   সালাম পেশ করবেন।
একাদশ  শতাব্দীর  দশম  মুজাদ্দিদ  আল্লামা মুল্লা  আলী ক্বারী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০১৪ হিজরি) তদীয়, مرقاة  شرح    مشكوة   ‘মিরকাত   শরহে   মিশকাত’  নামক কিতাবের পঞ্চম জিলদের ২৪৫ পৃষ্ঠা باب الحشر ‘বাবুল হাশর’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন,
(ويكون الرسول) اى رسولكم ...  والمراد محمد   صلى  الله  عليه    وسلم  (عليكم  شهيدا)   اى  ...  وناظرا  لافعالكم ومزكيا لاقوالكم-
ভাবার্থ: হাশরের ময়দানে পূর্বেকার নবীগণের বেঈমান উম্মতগণ    তাদের    নিকট    দ্বীনের   দাওয়াত   পৌঁছাননি বলে     আল্লাহর   দরবারে    অভিযোগ    উত্তাপন   করলে,  আল্লাহতা’য়ালা নবীগণকে তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করতে আদেশ করলে নবীগণ হযরত        মোহাম্মদ        মোস্তফা        সাল্লাল্লাহু        আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  ও   তাঁর  উম্মতগণকে  সাক্ষী  হিসেবে  পেশ  করবেন।   উম্মতে   মোহাম্মদীগণ    সম্মানিত     নবীগণের পক্ষে   সঠিকভাবে   দাওয়াত    পৌঁছানোর   সাক্ষ্য  প্রদান করলে, আপত্তি  উত্থাপন হবে,  তোমাদেরকে এ বিষয়ে কে    শিক্ষা    দিয়েছেন?     উত্তরে   উম্মতে   মোহাম্মদীগণ  বলবেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন এবং  আমরা  তা  একিন  বা  বিশ্বাস  করে  সাক্ষ্য  প্রদান  করলাম  যে,  পূর্বেকার  নবীগণ  উম্মতের  নিকট  দ্বীনের  দাওয়াত সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন।
উম্মতের  এ  সাক্ষী  প্রত্যক্ষদর্শী  সাক্ষী   নয়  বরং   শোনা একিনী সাক্ষী। এ হল উম্মতে মুহাম্মদীর شهيد ‘শাহীদ’ বা شهداء ‘শুহাদা’ হওয়ার ভাবার্থ।
আল্লাহ তা’য়ালার নূরানী ফরমান- ويكون الرسول عليكم شهيدا      নূর     নবী        সাল্লাল্লাহু      আলাইহি     ওয়াসাল্লাম তোমাদের   উপরে    অর্থাৎ   উম্মতে   মুহাম্মদীর   সাক্ষীর  উপর    সাক্ষী।   সুতরাং   নবীর   সাক্ষী    হল    প্রত্যক্ষদর্শী  সাক্ষী।
মুল্লা    আলী   ক্বারী-    ويكون   الرسول    عليكم   شهيدا    এ আয়াতে কারীমার তাফসিরে বলেন,
ناظرا لافعالكم مزكيا لاقوالكم-
হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ  দেখেন    এবং  হাশরের    ময়দানে  উম্মতের সাক্ষীকে    সার্টিফাই     করবেন,    সঠিক     বলে    সত্যায়ন করবেন।          এককথায়        নবী         সাল্লাল্লাহু        আলাইহি  ওয়াসাল্লাম      খোদা      প্রদত্ত        ক্ষমতা      বলে      উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন।
এ  আক্বীদার   মাসআলাকে  স্পষ্টভাবে   বর্ণনা  করেছেন  দশম    শতাব্দীর   নবম    মুজাদ্দিদ    ইমাম   জালালউদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত (ওফাত ৯১১ হিজরি) তদীয়- الحاوى    للفتاوى   ‘আল   হাভী   লিল   ফাতাওয়া’    নামক কিতাবের ২/১৮৪ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ করেন, النظر فى اعمال امته        আল্লাহর         হাবিব         উম্মতের        আমলসমূহকে দেখেন।
মুদ্দাকথা    হল    নবী     সাল্লাল্লাহু    আলাইহি     ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ  দেখেন   এবং  উম্মতের কথাবার্তা শুনেন   এ   ক্ষমতা   নবীকে    স্বয়ং   আল্লাহতা’য়ালা    দান করেছেন।
শায়খুল   মুহাদ্দিসীন হযরত শেখ আব্দুল   হক মুহাদ্দিসে দেহলভী  আলাইহির  রহমত  তদীয়  اخبار  الاخيار  مع  مكتوبات    ‘আখবারুল    আখইয়ার    মা’য়া    মাকতুবাত’  নামক      কিতাবের      ১৫৫      পৃষ্ঠা      পাদটীকায়      উল্লেখ  করেন,
وباچندیں  اختلافات  وکثرت  مذاھب  کہ  در  علماء  امت   ست  یک کس رادریں  مسئلہ    خلافی نیست کہ   آن   حضرت صلی  اللہ علیہ وسلم بحقیقت حیات  بی شائبہ مجاز وتوھم  تاویل   دایم  وباقی   ست   وبر  اعمال  امت  حاضر  و   ناظر     و مرطالبان حقیقت  را ومتوجھان آنحضرت را  مفیض ومربی  ست-
উম্মতে মুহাম্মদীর ওলামাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য ও  মাযহাবের   আধিক্য   সত্ত্বেও    এ  মাসআলায়  কারো   দ্বিমত নেই যে, হযরত  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকের অবকাশ  ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত     জীবনে    জীবিত,     স্থায়ী     ও     বিরাজমান    এবং উম্মতের     আমলসমূহের     প্রতি      হাজির     ও       নাজির। হাকিকত        অন্বেষণকারী       ব্যক্তিবর্গ      এবং       আল্লাহর হাবিবের     দিকে    মুতাওয়াজ্জাকারী    নবীর    প্রেমিকগণ  তাঁরা  মদিনা    ওয়ালার   পক্ষ   থেকে  ফয়েজ  ও  বরকত লাভ   করতে  সক্ষম   হবেন   এবং  স্বয়ং  আল্লাহর  হাবিব তার গার্ডিয়ান হয়ে যাবেন। 
ইমাম   জালালউদ্দিন  সুয়ুতি   আলাইহির  রহমত   তদীয় ‘আল হাবি    লিল  ফাতাওয়া’  নামক  কিতাবের ২/১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
قال المتكلمون المحققون من اصحابنا ان نبينا صلى  الله عليه وسلم  فى بعد   وفاته  وانه يسر بطاعات  امته  ويحزن بمعاصى  العصاة منهم وانه   تبلغه صلاة من    يصلى عليه من امته-
ভাবার্থ:   আহলে  সুন্নাত   ওয়াল    জামায়াতের  আকাইদ  শাস্ত্রের     পারদর্শী     মুহাক্কিক     উলামায়ে     কেরামগণের  অভিমত হলো, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   ওফাতশরীফের   পরে   স্বশরীরে  জীবিত   রয়েছেন।  নিঃসন্দেহে  উম্মতের    এতায়াত   বা নেককাজে  তিনি  আনন্দে  মুখরিত   হয়ে   পড়েন  এবং  উম্মত   যখন গোনাহের  কাজে লিপ্ত হয়ে    পড়ে, তখন  হাবিবে খোদা  দুঃখ   অনুভব   করেন। নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর    উপর  দরূদ  ও  সালাম  পেশ  করে,  সে  দরূদ  ও সালাম    হাবিবে   খোদার   নিকট    পৌঁছে    যায়।    অর্থাৎ ছরকারে      দু’জাহা      তাজেদারে      মদিনা       নিজ       কান মোবারক দ্বারা দরূদ ও সালামের আওয়াজ শুনতে পান এ ক্ষমতা আল্লাহ তাঁর হাবিবকে দান করেছেন।’
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা   খাঁন   আলাইহির   রহমত   তদীয়   الدولة   المكية  ‘আদ  দৌলাতুল  মক্বিয়া’ নামক   কিতাবের  ৩৮  পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
قال   الله   تعالى   وكذلك   نرى   ابراهيم   ملكوت   السموات  والارض   وللطبرانى    فى  كبيره  ونعيم  ابن  حماد   فى  كتاب الفتن   وابى  نعيم فى الحلية  عن عبد الله بن عمر الفاروق  رضى الله تعالى  عنهما    عن    النبى صلى الله تعالى  عليه  وسلم قال ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو  كائن  فيها  الى  يوم   القيمة  كانما  انظر  الى   كفى  هذه جليانا  من  الله  تعالى جلاه  لنبيه كما  جلاه لنبيين من قبله صلى الله تعالى عليه وسلم وعليهم اجمعين-
ভাবার্থ:  আল্লাহ  আজ্জা   ওয়া  জাল্লার    নূরানী    ফরমান,  এমনিভাবে আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্তআকাশ      ও     সপ্তজমিনের     মালাকুত      বা      আশ্চর্য  নিদর্শনাবলী  ও সূক্ষ্মতম বস্তুসমূহকে দেখিয়েছি। ইমাম তাবরানী  আলাইহির   রহমত  তাঁর   ‘কিতাবুল   ফাতান’ এবং আবু নাঈম  ‘হিলয়াতুল  আউলিয়া’র মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ   ইবনে  ওমর  ফারুক  রাদিয়াল্লাহু  আনহু   হতে রেওয়ায়েত করেন।
(এছাড়াও  সহিহ  বুখারিশরীফের   ব্যাখ্যাকার  আল্লামা  ইমাম    কাসতালানী    রাদিয়াল্লাহু    আনহু     ‘মাওয়াহিবে  লাদুনিয়া’ নামক কিতাবের ২য়     জিলদের ১৯২  পৃষ্ঠায় তাবরানীশরীফ        এর      বরাত      দিয়ে     এ     হাদিসখানা রেওয়ায়েত করেছেন।)
দশম শতাব্দীর  নবম   মুজাদ্দিদ  ইমাম  আল্লামা জালাল উদ্দিন  সুয়ুতি আলাইহির  রহমত (ওফাত ৯১১ হিজরি) তদীয়  الخصائص  الكبراى   ‘খাসাইসে  কোবরা’ নামক কিতাবের              দ্বিতীয়             জিলদের             ১৮৫            পৃষ্ঠায় তাবরানীশরীফের         বরাত        দিয়ে         এ         হাদিসখানা দলিলরূপে রেওয়ায়েত করেছেন।
হাদিসশরীফের  ভাবার্থ হলো, ‘হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে  উমর    রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত  নূরনবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি       ওয়াসাল্লাম      এরশাদ       করেছেন,       নিশ্চয়  আল্লাহতা’য়ালা আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন,     (জাহির      করেছেন)     সুতরাং     আমি      সারা  বিশ্বজগতকে  দেখছি  এবং  কিয়ামত  পর্যন্ত  যা  কিছু  এ  জগতে   হবে   দেখতে   থাকব।   যেমন   হাতের   তালুকে  দেখছি। এটি আল্লাহতা’য়ালা প্রদত্ত আলো,  যেটি তিনি তার   হাবিব    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লামের   জন্য প্রজ্জ্বলিত  করেছেন,  যেভাবে  পূর্ববর্তী  নবীগণের  জন্য  প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন।’
এ  হাদিসশরীফের  ব্যাখ্যায়   ইমাম  আল্লামা   মোহাম্মদ  ইবনে    আব্দুল    বাকী     জারকানী     মালিকী     আলাইহির রহমত  তদীয়   ‘জারকানীশরীফ’  নামক কিতাবের  ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
اى  اظهر  وكشف لى الدنيا بحيث  بجميع ما فيها فانا  انظر اليها    (الخ)   اشارة   على    انه  نظر  حقيقى  دفع    انه  اريد  بالنظر العلم ولا يراد انه اخبار عن مشاهدة-
ভাবার্থ:    আল্লাহপাক   আমার   সামনে   সারা     দুনিয়াকে উঠিয়ে   রাখছেন  অর্থাৎ   সারা   দুনিয়াকে   আমার   জন্য জাহির    ও    কশ্ফ   করে   খুলে    দিয়েছেন     এভাবে    যে, আমার       আয়ত্ত্বাধীনে       সারা      দুনিয়ার      বস্তুকে      করে দিয়েছেন।   সুতরাং   আমি    সারা    বিশ্বজগতকে   দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব। আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু    আনহু     বলেন,   রাসূলে   মকবুল   সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   খোদা    প্রদত্ত   ক্ষমতাবলে    নিজ চোখ  মোবারক  দ্বারা হাকিকী নজরে দেখছেন। এখানে নজরে ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবে  না  এবং তা  দেখার  সংবাদ ও মুরাদ লওয়া হবে না।’
মুদ্দাকথা হলো কোরআনে কারিমার আয়াতে কারীমা ও হাদিসশরীফ   দ্বারা   স্পষ্টভাবে  প্রমাণিত   হলো,  নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন  এবং  তাঁকে  আল্লাহতা’য়ালা  হাজির  ও  নাজির  করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
এ   প্রসঙ্গেই   শারফুদ্দিন  আল  হুসাইন   ইবনে    মুহাম্মদ  ইবনে   আব্দুল্লাহ   আততিবী    আলাইহির   রহমত  তদীয় شرح الطيبى  على مشكاة المصابيح  নামক কিতাবের প্রথম জিলদের ৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, 
كذا الاصوليون  مما اوردا من قوله : اذا  رويتم  عنى حديثا فاعرضوا  على  كتاب  الله  فان   وافق  فاقبلوه  وان   خالف   فردوه-
ভাবার্থ:  যেমন   উসূলবিদগণ  বলেন,  রাসূল     সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম   এর  বাণী  তোমরা  যখন  আমার  পক্ষ     থেকে   কোন   হাদিস      দেখ   তখন   তা     আল্লাহর কিতাবের    সাথে    মিলিয়ে    দেখ,    যদি      তা      আল্লাহর  কিতাবের    অনুকূলে    হয়    তা    গ্রহণ    কর।    আর    যদি  আল্লাহর      কিতাবের      ব্যতিক্রম      পাও      তাহলে          তা প্রত্যাখ্যান কর।
সুতরাং     ان  الله   قد  رفع  لى    الدنيا    এ  হাদিসশরীফের ভাবার্থ কোরআন পাকের আয়াতে    কারীমা  كذالك   نرى ابراهيم    এ    আয়াতে     কারীমার     ভাবার্থের    সাথে    পূর্ণ মুয়াফিক      বা    সামঞ্জস্যশীল    থাকায়    এ     হাদিসখানা  গ্রহণযোগ্য। 

06:15

যেসব ক্ষেত্রে দরূদ পাঠ করা মাকরূহ

রদ্দুল মুহতার বা শামী কিতাবের প্রথম জিলদের ৫১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

تكره الصلوة عليه صلى الله عليه وسلم فى سبعة مواضع الجماع  وحاجة الانسان وشهرة المبيع والعثرة وتعجب والذبح والعطاس-
অর্থাৎ সাতস্থানে দরূদশরীফ পাঠ করা মাকরূহে  তাহরিমী,

১. স্ত্রী সহবাসের করার সময়
২. প্রস্রাব পায়খানার সময়
৩. ব্যবসার মাল প্রকাশ করার সময়
৪. হোচট খেয়ে পড়ে গেলে
৫. কোন কিছুতে আশ্চর্য হলে
৬. জীবজন্তু জবেহ করার সময়
৭. হাই তোলার সময়।

উপরোক্ত সাতটি   স্থান ব্যতীত অন্য কোন সময় দরূদশরীফ পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।

06:15

যেসব ক্ষেত্রে সালাত-সালাম পাঠ করা বরকতময়

১. হানাফি মাযহাবের উলামায়ে কেরামদের মতে  নামাযের শেষ তাশাহহুদের দরূদশরীফ  পাঠ করা সুন্নত।

২. দোয়ার শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে দরূদশরীফ পাঠ করা অতিব প্রয়োজন। ইবনে আতা আলাইহির রহমত বলেন, দোয়ার আরকান, বাহু, সময় এবং  উপকরণ রয়েছে। যদি দোয়ার আরকান উপযোগী হয় তবে এ দোয়া অতি শীঘ্র আসমানের দিকে উত্থিত হয়। যদি  সময় উপযোগী হয়, তবে দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়। যদি উপকরণ উপযোগী হয়  সে দোয়া মাকসুদ পর্যন্ত তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায়।

ক) দোয়ার আরকান হল   মনের একাগ্রতা ও একনিষ্টতা, বিনয় ও নম্রতা, চক্ষু বন্ধ করে কাকুতি  মিনতি করা। খ) দোয়ার বাহু হল সিদ্ক বা সত্যনিষ্ট। গ) দোয়ার সময় হলো শেষ রাত্র। ঘ) দোয়ার উপকরণ হল নূরনবীর উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা।

হাদিস শরীফে রয়েছে যে দোয়ার প্রথম ও  শেষে দরূদশরীফ থাকে সে দোয়া কখনো বাতিল হয় না। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৩.  জুমুয়ার নামাযের খুতবায় নূরনবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা  প্রয়োজন। ইহা খুতবার একটি অংশ। খুতবা ইবাদতের  অংশ, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লাহর  আলোচনা এতে শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং আযান ও নামাযের মধ্যে নূরনবীর প্রতি দরূদ ও সালাম যেমন ওয়াজিব, তেমনি জুমুয়ার খুতবায় ও নূরনবীর প্রতি দরূদ ও সালাম ওয়াজিব। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৪. হযরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই মসজিদে প্রবেশ করি তখন বলি,
السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته وصل الله وملائكته على محمد-

এর পরক্ষণেই পড়ে নিবেন,
اللهم افتح لى ابواب رحمتك
(মাদারিজুন নবুয়ত)

৫. হজ্জ্বের ইহরামের সময়ে, উমরার সময়ে, তালবিয়ার সময়ে, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানোর  সময়েও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ পাঠের উল্লেখ রয়েছে। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৬. সমাবেশ ও অনুষ্ঠানেও নবী করিম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা অতিব প্রয়োজন। এতে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিরমিজি শরীফে সংকলিত একটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,  নূরনবীর আলিশান ফরমান হলো, কোন ব্যক্তি যেন এমন কোন সমাবেশে না বসে যেখানে আল্লাহ  তা’য়ালার হামদ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি সালাম ও দরূদশরীফ প্রেরণ না করা হয়। কেননা এসব লোক কিয়ামতের ময়দানে হাবিবে খোদার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ না করার দরূন অনুতাপ ও   অনুশোচনায় দগ্ধ হতে হবে। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৭.  তাবরানী হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে উসূলে হাদিসের পরিভাষায় মারফু হিসেবে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, যে নূরনবী সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলায় দশবার এবং সন্ধ্যা বেলায় দশবার আমার প্রতি দরূদ  পাঠ করে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভে ধন্য হবে। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৮. হাদিসশরীফে রয়েছে   যে, নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে কেউ নিজের রচিত গ্রন্থে আমার উপর দরূদ লেখবে তার সেই গ্রন্থ যতদিন অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন  ক্রমাগতভাবে ফেরেশতা লেখকের   জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (মাদারিজুন নবুয়ত)

৯. রাতের নামাযের উদ্দেশ্যে ঘুম হতে উঠার পর, অযু করার পর, তাহাজ্জুদ আদায়ের পর,  জুমুয়ার দিন, সোমবার দিন, প্রভৃতি সময়ে দরূদশরীফ পাঠের বিধান হাদিসশরীফে উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া সুবহে সাদিকের সময়, কা’বাঘর দেখার পর, হাজরে আসওয়াদে  চুমু খাওয়ার সময়, কা’বাঘর তাওয়াফ করার সময়, হজ্জ্ব পালনের   নিমিত্তে বিভিন্নস্থানে গমনের সময় অর্থাৎ হজ্জ্ব এর  পালনী অনুষ্ঠানসমূহে।

নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করার সময়, আল্লাহর হাবিবের অবস্থানের স্থান সমূহে যেমন মসজিদে  কুবা, বদর প্রান্তর, ওহুদ পাহাড়, মসজিদে নববী প্রভৃতি স্থানে উপস্থিত হওয়ার সময় দরূদ পাঠ করা অতিব প্রয়োজন।

এতদ্ব্যতীত কোন কিছু বিক্রি করার সময়, ওসিয়তনামা লেখার সময়, সফরের  ইচ্ছা করার সময়, বাজারে পৌঁছার পর, ব্যস্ততার সময়ে, অবসর   সময়ে, অমনোযোগী অবস্থার সময়, দাওয়াতে যাওয়ার সময়, দাওয়াত রক্ষা করে ফিরে যাওয়ার সময়, কোন প্রকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ার সময়, ভয়-ভীতি ও সন্ত্রস্ত অবস্থার সময়, গৃহপালিত পশু পালিয়ে গেলে, গৃহভৃত্য পালিয়ে গেলে, যে কোন জিনিস হারিয়ে গেলে, দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময়ে, রোগ-মহামারী দেখাদিলে, পা অবশ হয়ে  গেলে, মুলা খাবার সময়ে, যেন খাওয়ার পর গন্ধযুক্ত ঢেকুর  না আসে, দরূদশরীফ পাঠ করা  প্রয়োজন।

পানি পান করার সময়, কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময়,  করমর্দনের সময়, ইসলামী সভা, অনুষ্ঠান বা সমাবেশে অংশগ্রহণের সময়, কোরআন শরীফ খতমের সময়, নির্দোষ আলাপ-আলোচনা শুরু করার  সময়, দ্বীনি ইলিম শিক্ষা শুরু করার সময়, হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ, ওয়াজ নসিহত শুরু করার সময়, হাদিস পাঠ করার সময়, শেষ করার  সময়, কোন জিনিস ভাল লাগলে দরূদশরীফ পাঠ করতে হবে।

১০. নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ-সালাম প্রেরণ বা লিখার সময়ে সালামও সঙ্গে মিলিয়ে লওয়া সমীচীন।

ইমাম নববী আলাইহির রহমত সালামবিহীন সালাত মিলানো মাকরূহ  বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা আল্লাহতা’য়ালা সালাত ও সালাম উভয়ের  আদেশ প্রদান করেছেন। ফতহুলবারী গ্রন্থে রয়েছে যে, শুধুমাত্র সালাত  প্রেরণ  করা এবং সালাম প্রেরণ না করা মাকরূহ। তবে হ্যাঁ, যদি একবার সালাম প্রেরণ করে বিরতি ছাড়াই সালাম প্রেরণ  করা হয়, তবে কোন ক্ষতি বা অসুবিধা  নেই। মাওয়াহিবেও এরূপ লেখা রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, দরূদ ও সালাম উচ্চারণ ও লেখার ক্ষেত্রে পূর্ণ শব্দ ব্যবহারই  পছন্দনীয়। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং  রাদিয়াল্লাহু আনহু, রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এভাবে  উচ্চারণ লেখাই বাঞ্ছনীয় ও  শোভনীয়। (মাদারিজুন নবুয়ত)

১১. নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সবসময় দরূদ ও সালাম প্রেরণ  করা মুস্তাহাব এবং উত্তম বন্দেগি। বিশেষত জুমুয়ার দিনে ও রাতে দরূদ প্রেরণ করা সর্বোত্তম। কেননা জুমুয়ার দিন সপ্তাহের সর্বোৎকৃষ্ট দিন এবং জুমুয়ার রাত সপ্তাহের সর্বোৎকৃষ্ট রাত।

কোন কোন আধ্যাত্মিক সাধকের মতে সুন্নি আক্বীদার বিশ্বাসী কামিল মুর্শিদ যদি না পাওয়া যায়, তাহলে  সত্যসন্ধ ব্যক্তিকে দরূদশরীফ  প্রেরণের অধিক  মনোযোগী হতে হবে এবং  দরূদশরীফ পাঠ করা নিজের জন্য অত্যাবশ্যক  বলে গ্রহণ করতে হবে। এতে তার অভ্যন্তরীন পরিশুদ্ধি এবং তা’লিম তরবিয়ত সম্পন্ন হবে। ধীরে ধীরে সে ব্যক্তি আল্লাহর  অধিক সান্নিধ্যে উন্নীত  হতে সক্ষম হবে। অধিক পরিমাণে দরূদশরীফ পাঠ করলে মনের মধ্যে নূরের সৃষ্টি হয়, সে নূরের দ্বারা আধ্যাত্মিক সাফল্য অর্জন করা যায়। অতঃপর নূরনবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবার হতে সরাসরি  সাহায্য সহযোগিতা ও পথ নির্দেশ লাভ করা যায়। (মাদারিজুন নবুয়ত)

06:15

যে দরূদশরীফের আমলে নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বেহেশতে অবস্থান করা সম্ভব

জজবুল কুলুব (উর্দু) ২৮৯ পৃষ্ঠায় নিম্নের দরূদশরীফ উল্লেখ রয়েছে,

اللهم صل على محمد  فى الاولين وصل على محمد فى الاخرين وصل على محمد فى النبيين وصل على محمد فى المرسلين وصل على محمد فى الملاء الاعلى الى يوم الدين اللهم اعط محمدن الوسيلة والفضيلة والشرف والدرجة الرفيعة وابعثه مقاما محمودا- اللهم امنت بمحمد ولم اره فلا تحرمنى فى الحيوة رؤيته وارزقنى محبته وتوفنى على لمته واسقنى من حوضه شرابا مرئيا سائغا هئييا لا اظمه بعده ابدا انك على كل شئ قدير اللهم بلغ روح محمد منى واله منا تحية وسلاما اللهم امنت به ولم  اره فلاتحرمنى فى الجنة رؤيته-

আল্লামা তিলমিছানী আলাইহির রহমত নিশাপুরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আতা বলেছেন, যে কেউ উপরোক্ত দরূদশরীফ সকাল-বিকাল তিনবার করে পাঠ করতে থাকে,

১. তার গোনাহ মাফ হতে থাকবে
২. তার ত্রুটি মিটে যাবে
৩. সর্বদা আনন্দিত থাকবে
৪. তার দোয়া কবুল হবে
৫. তার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে
৬. দুশমনের উপর জয়যুক্ত হবে
৭. নেককাজ করার তাওফিক হবে
৮. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লামার সাথে বেহেশতে থাকবে।

মুহাক্বিক শেখ  আব্দুল হক মুহাদ্দিসে  দেহলভী আলাইহির রহমত উপরোক্ত ফায়দাসমূহ جذب القلوب ‘জজবুল কুলুব’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

06:15

দরূদে জুমুয়া

صل الله على النبى الامى  واله وصلى الله عليه وسلم صلوة وسلاما عليك يارسول الله-

ফজিলত:  এ দরূদশরীফকে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগণ দরূদে রেজভীয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ জন্য যে আ’লা হযরত ইমাম  আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত মখতছর   তিনটি দরূদশরীফকে একত্রে তারতীব দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ দরূদশরীফকে এক মরতবা পাঠ করবে প্রকৃতপক্ষে তিন মরতবা দরূদশরীফ পাঠ  করার সওয়াবের অধিকারী হবে। (আল অজিফাতুল কারীমা)

জুমুয়ার নামায আদায় করার পর মদিনাশরীফের দিকে মুখ  করে আল্লাহর হাবিব  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির ও নাজির ঈমান রেখে নামাযের ন্যায় হাত বেধে দাঁড়িয়ে একশতবার এ দরূদশরীফ পাঠ করবেন।  কয়েকজন একত্রিত হয়ে জামায়াত সহকারে দরূদশরীফ পাঠ করলে অধিক সওয়াবের অধিকারী হবেন।

সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৩য় জিল্দ ২৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
عن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه  وسلم اكثروا الصلوة على يوم الجمعة وليلة الجمعة فمن صلى على صلوة صلى الله عليه عشرا-

‘হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা জুমুয়ার দিন ও রাতে আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদশরীফ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদশরীফ পাঠ   করবে, আল্লাহপাক তার    প্রতি দশটি রহমত নাজিল করবেন।’

দরূদেতাজ
======
اللهم صل على سيدنا ومولانا محمد صاحب التاج والمعراج والبراق والعلم- دافع البلاء  والوباء والقحط والمرض والالم-اسمه مكتوب مرفوع مشفوع منقوش  فى اللوح والقلم- سيد العرب والعجم- جسمه مقدس معطر مطهر منور فى البيت والحرم- شمس الضحى بدر الدجى صدر العلى نور الهدى كهف الورى مصباح الظلم- جميل الشيم- شفيع  الامم- صاحب الجود والكرم- والله عاصمه وجبريل خادمه والبراق  مركبه والمعراج سفره وسدرة المنتهى مقامه وقاب قوسين مطلوبه والمطلوب مقصوده والمقصود موجوده سيد المرسلين  خاتم النبين شفيع المذنبين انيس الغريبين رحمة للعلمين راحة العاشقين مراد المشتاقين شمس العارفين سراج السالكين مصباح المقربين محب الفقراء والغراباء والمساكين سيد الثقلين نبى الحرمين امام القبلتين وسيلتنا فى الدارين صاحب قاب قوسين محبوب رب المشرقين والمغربين جد الحسن والحسين مولانا ومولى الثقلين ابى القاسم محمد بن عبد الله نور من نور الله- يا  ايها المشتاقون بنور جماله صلوا عليه وسلموا تسليما-

দরূদে তুনাজ্জিনা
==========
اللهم صل على سيدنا محمد صلوة تنجينا بهامن جميع الاهوال والافات وتقضى لنا بها جميع الحاجات وتطهرنا بها من جميع السيئات وترفعنا بها عندك على الدرجات وتبلغنا بها اقصى الغايات من جميع الخيرات فى الحيوة وبعد الممات انك على كل شئ قدير-

ফজিলত : দালাইলুল খাইরাতের শরাহ ‘মানাহিজুল হাছানাত’ নামক  কিতাবে রয়েছে ইবনে ফাকেহানী স্বরচিত ‘ফজরে মুনির’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, শায়খ সালেহ মুসা নামী একজন দৃষ্টিহীন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি   আমার নিকট একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন, একদিন একটি  জাহাজ ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ জাহাজে আমি নিজেই ছিলাম। তন্দ্রাবস্থায় আমি  হঠাৎ দেখলাম, হুজুর  পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ দরূদশরীফ শিক্ষা দিলেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, জাহাজে অবস্থানকারী ব্যক্তিগণ যেন একহাজার  মর্তবা এ দরূদশরীফ পাঠ করে নেয়। মাত্র তিনশ মরতবা এ দরূদশরীফ পাঠ করতে না করতেই জাহাজটি খোদার মর্জিতে বিপদ থেকে মুক্তি পেল। (আমালে রেজা)


দরূদে নূরী
======
اللهم صل صلاة  كاملة وسلم سلاما تاما على سيدنا ومولنا محمدن الذى تنحل به العقد وتنفرج به الكرب وتقضى به الحوائج  وتنال به الرغائب وحسن الخواتم- ويستسقى الغمام بوجهه الكريم وعلى اله وصحبه فى كل لمحة ونفس بعدد كل معلوم لك يا الله-

ফজিলতঃ  মুশকিলাত বা কঠিন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দরূদশরীফের আমল  পরীক্ষিত। কোন জায়েয (বৈধ) মকসুদ  পূর্ণ হওয়ার  জন্যে একাধারে এশার   নামাযের পর ২১ দিন পর্যন্ত একশবার করে পাঠ করলে ইনশায়াল্লাহ নেক মকসুদ পূর্ণ হবে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর অজিফা পাঠ, বিশেষ করে এশার নামাযের পর মদিনাশরীফের দিকে মুখ করে তা’জিমের সাথে নবীকে হাজির ও নাজির ঈমান রেখে ১০০ বার দরূদ পাঠ
=======
১. ফজরের নামাযের পর لا اله الا الله  الملك الحق المبين একশত বার
২. জুহরের নামাযের পর ৫০০ বার অথবা ২৫ বার পাঠ করবেনحسبى الله ونعم الوكيل
৩. আসরের  নামাযের পর তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করবেন। ৩৩বার সুবহানাল্লাহ,  ৩৩বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩বার আল্লাহু আকবার। একবার- لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شئ قدير
৪. মাগরিবের নামাযের পর কালেমায়ে তামজিদ পাঠ করবেন পাঁচশত বারسبحان الله والحمد لله
৫. এশার নামাযের পর যে কোন দরূদশরীফ একশত বার পাঠ করবেন।

প্রত্যেহ এশার নামাযের পরে মদিনা মুনাওয়ারার দিকে মুখ করে  আল্লাহর  হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুরত মোবারককে حاضر ও ناظر ‘হাজির ও নাজির’ ঈমান রেখে আদবের সঙ্গে  বসে অথবা দাঁড়িয়ে যে কোন  দরূদশরীফ একশতবার পাঠ করবেন। এ আমল অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময়।

দলিল
ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বাদশ মুজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১২৩৯ হিজরি) তদীয় فتاواى عزيزى ‘ফাতাওয়ায়ে আজিজিয়া’ নামক কিতাবের প্রথম জিলদের ১৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
بعداز نماز  عشاء درود بہر صیغہ کہ باشد صد بار متوجہ بسمت  مدینہ منورہ شدہ واستحضار صورت مبارک پیغمبر صلی اللہ علیہ وسلم نمودہ باید خواند-

মুদ্দাকথা হলো সদাসর্বদা সালাত ও সালাম পাঠ করার অভ্যাস করে নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বিশ্বাসও রাখতে হবে যে, আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবিবকে এ  ক্ষমতাও দান করেছেন,  হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উম্মতের দরূদ ও সালাম নিজ কান মোবারক দ্বারা শুনছেন এবং চক্ষু মোবারক দ্বারা দেখছেন।

এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফের ৬৯/৭০ পৃষ্ঠায় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর  হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এরশাদ করেন,

رأيت ربى عز وجل فى احسن صورة قال فيم تختصم الملا الاعلى قلت انت اعلم قال فوضع كفه بين كتفى فوجدت بردها بين ثديى فعلمت ما  فى السموات والارض وتلا وكذالك نرى ابراهيم ملكوت السموات والارض وليكون من الموقنين (رواه الدارمى مرسلا وللترمذى نحوه عنه الخ-)

উপরোক্ত হাদিসশরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় اشعة اللمعات ‘আশিয়াতুল লুমআত’ নামক কিতাবের ১/৩৩৩ পৃষ্ঠায় বিশদভাবে  বর্ণনা করেছেন। হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এরশাদ করেন, ‘আমি  আল্লাহতা’য়ালাকে احسن صورة অতি উত্তম সুরতে অর্থাৎ উত্তম সিফাতে দেখেছি (কারণ আল্লাহ নিরাকার) আল্লাহতা’য়ালা আমাকে প্রশ্ন করলেন এ  কেমন আমল যে আমল সম্পর্কে ফেরেশতাগণ পরস্পর কথাবার্তা বলছেন? উত্তরে আমি বললাম قلت انت اعلم এ ব্যাপারে আপনিই ভাল জানেন।

قال فوضع كفه بين كتفى فوجدت بردها بين ثديى

হাবিবে খোদা বলেন, অতঃপর আল্লাহতা’য়ালা তাঁর সিফাতে কাইয়ুমিয়ার তজল্লী আমার দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থানে রাখলেন।  এর দ্বারা  আমি নিজ বক্ষে এর শীতলতা অনুভব করলাম।

আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  পবিত্র কলবে এ ফয়েজের প্রভাব প্রতিফলিত হওয়া এবং কলবশরীফে শীতলতা  অনুভবের অর্থ হলো আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ব্যাপক ফয়েজ, বরকত ও ইলিম অর্জনের রাস্তা উম্মুক্ত হয়ে যাওয়ার পরক্ষণেই বললেন,
فعلمت ما فى السموات والارض-
অর্থাৎ ‘অতঃপর সপ্তআকাশ ও সপ্তজমিনে যা কিছু  রয়েছে, সবকিছু আমি অবগত হয়ে গেলাম।’

আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত বলেন,
پس دانستم ہرچہ در آسمان ھا وہرچہ در زمین بود عبارت است از حصول تمامۂ علوم جزوی وکلی واحاطۂ آن-

এ এবারত দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল ছোট থেকে ছোট এবং বড় থেকে বড় সবকিছুর জ্ঞান মাহবুবে মতলক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাপ্ত হয়েছেন এবং ঐ সবকিছু তাঁর আয়াত্বাধীনে রয়েছে।

আল্লাহর  হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সপ্তআকাশ ও সপ্তজমিনের যাবতীয় ইলিম অর্জন করা যে তাঁর পক্ষে  সম্ভব তা প্রমাণ করার জন্য দলিলরূপে এ আয়াতে  কারীমা তেলাওয়াত করলেন,
وكذالك نرى ابراهيم ملكوت السموات والارض وليكون من الموقنين- )سورة انعام(

এমনিভাবে আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্তআকাশ ও  সপ্তজমিনের মালাকুত বা  আশ্চর্য নিদর্শনাবলি ও সূক্ষ্মতম বস্তুসমূহকে দেখিয়েছি যেন ইব্রাহিম আলাইহিস  সালাম আল্লাহ তা’য়ালার যাত, সিফাত ও একত্ববাদ এর অজুদের প্রতি একিন বা দৃঢ় বিশ্বাসকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।

(وليكون من الموقنين- تاآنکہ گردد ابراھیم از یقین کنندگان بوجود ذات وصفات)

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, যেহেতু আল্লাহতা’য়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্তআকাশ  ও সপ্তজমিনের নিদর্শনাবলি দেখিয়েছেন  এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালামও খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেখলেন, দেখতে রইলেন, এ  দেখার ক্ষমতাতো আল্লাহপাকই দান করলেন। এমনিভাবে  আল্লাহপাক তাঁর হাবিবকে উম্মতের সালাত ও সালাম নিজ কান মোবারক দ্বারা শ্রবণ করার ক্ষমতা দান করেছেন। সুতরাং আল্লাহর হাবিব উম্মতের  সালাত ও সালাম শুনেন  এবং তাদেরকে দেখেন, এ হলো খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা।

সে প্রেক্ষাপটে শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত এক চমৎকার আমল তরিকতপন্থী মুসলমানগণকে তা’লিম প্রদান করলেন,

এশার নামাযের পর আল্লাহর  হাবিবকে হাজের ও নাজের ঈমান  রেখে, মদিনা মুনাওয়ারার দিকে মুখ করে একশত বার দরূদশরীফ পাঠ করবেন সকল সুন্নি মুসলমান।

আল্লাহর হাবিব যে উম্মতের কাছে হাজির সে প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় مدارج النبوة  ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের ১/৩১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
وما ارسلناك الا شاهدا اى عالم  وحاضر بحال امت وتصديق وتكذيب ونجات وهلاكت-
ভাবার্থ: আল্লাহ তা’য়ালার  কালাম- وما ارسلناك الا شاهدا হে আমার হাবিব আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ অর্থাৎ উম্মতের সকল অবস্থার সম্মন্ধে অবগত জ্ঞানী এবং উম্মতের সর্বাবস্থায় হাজির, উম্মতের মধ্যে  কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী,  কারা নাজাতপ্রাপ্ত এবং  কারা হালাকত বা ধ্বংসের মধ্যে আছে, এ সম্মন্ধে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আপনাকে প্রেরণ করেছি। আয়াতে কারীমার অর্থ হলো  হে আমার  হাবিব আপনাকে আমি উম্মতের জন্য হাজের ও নাজির করে প্রেরণ করেছি।

ক. আল্লামা ইমাম রাগেব ইস্পাহানি আলাইহির রহমত (ওফাত ৫০২  হিজরি) তদীয়- مفردات  راغب ‘মুফরাদাতে রাগিব’ নামক কিতাবের ২৬৭  পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
الشهود والشهادة الحضور مع المشاهدة  اما بالبصر اوبالبصيرة-
ভাবার্থ: شهود  ‘শুহুদ’ ও شهادت ‘শাহাদাত’ এর অর্থ হচ্ছে, ঘটনাস্থলে  প্রত্যক্ষভাবে দেখার সাথে সাথে হাজির বা উপস্থিত থাকা।

اما بالبصر আল্লাহর হাবিব খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নিজ চোখ মোবারক দ্বারা বাহ্যিক সবকিছু দেখেন এবং بصيرة ‘বাছিরা’  দ্বারা প্রত্যেক বস্তুর হাকিকত এবং বাতিনের সবকিছু দেখেন।

البصيرة  قوة للقلب المنور بنور القدس ترى حقائق الاشياء وبواطنها- (زرقانى)
অর্থাৎ ‘বাছিরা’ হলো নূরানী কলবের একটা পাওয়ার বা ক্ষমতা যা আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবিব  মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন। যা দ্বারা হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবকিছুর হাকিকত এবং বাতেনি বস্তুসমূহ দর্শন করে থাকেন। (জারকানী ১/১৫ পৃষ্ঠা)

খ. بحر الرائق ‘বাহরুর রায়েক’ নামক কিতাবের সপ্তম জিলদের ৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,

ان الشهادة اسم من المشاهدة  وهى الاطلاع على الشئ عيانا فتشترط فى الاداء ما يبنى عن المشاهدة-
অর্থাৎ ‘শাহাদত’ শব্দটি ‘মুশাহাদাহ’ হতে গঠিত। আর মুশাহাদাহ হলো কোন বস্তুকে চাক্ষুস দেখে এ বিষয়ে অবগতি অর্জন করা। এজন্য  সাক্ষ্য প্রদানে স্বচক্ষে দর্শন যুক্ত করা হয়েছে।

গ.  المنجد ‘আল মনজিদ’ নামক অভিধানের ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
والشهيد الذى لايغيب شئ من علمه الشاهد الذى يخبربما شهده-
অর্থাৎ ‘সমূহবস্তুর জ্ঞান যার আছে তাকে شهيد ‘শাহীদ’ বলা হয়ে থাকে। আর যিনি দেখে দেখে সাক্ষ্য প্রদান করে থাকেন তাকে شاهد ‘শাহিদ’ বলা হয়ে থাকে।’

মুদ্দাকথা  হলো নূর নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে হাজির ও নাজির ঈমান রেখে দরূদ ও সালাম প্রেরণ করলে এর পূর্ণ ফয়ুজাত নসিব হবে।

MKRdezign

TAGS

২০ রাকাত তারাবিহ (1) ৪ ইমামের জীবনী (4) ৭৩ দল (1) আমল (2) আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা (2) আসমাউন নবী (ﷺ) (1) আহলুস-সুন্নাহ (2) আহলে কুরআন ফির্কা (1) ইনসান (1) ইবনে তাইমিয়্যা (1) ইমান (3) ইলমে গায়েব (1) ইসলামের ভিত্তি (1) উসীলা (8) এপ্সঃ আল আউলিয়া (54) ওহাবী (3) কবর ও মাযার জিয়ারত (2) কিতাবঃ ৪০ হাদিস মুখস্ত রাখার ফজিলত (41) কিতাবঃ আকাইদে আহলুস সুন্নাহ (7) কিতাবঃ ইসলামের মূলধারা [মঈনুদ্দীন আশরাফী] (21) কিতাবঃ উচ্চস্বরে জিকিরের বিধান [ইমাম সুয়ূতী] (2) কিতাবঃ নবীগণ (আঃ) স্বশরীরে জীবিত - ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) (4) কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান (16) কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর [হাদ্দাদ দামেশকী] (1) কিতাবঃ শাহ নেয়ামাতুল্লাহ (রহঃ)'র ভবিষ্যদ্বাণী (1) কিতাবঃ সালাফীদের জবাবে কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ [ইকরাম উদ্দীন] (14) কিতাবুল ফিতান (1) কিয়াম (1) ক্বদরিয়া ফির্কা (1) খারেজী (3) জামাতে ইসলামের ভ্রান্ত আকিদা (2) জাহমীয়া ফির্কা (1) তরিকত (1) তাবলীগ (2) দাজ্জাল (1) দুরুদ (1) দেওবন্দী আক্বিদা (1) দোয়া কবুলের নিয়ম (1) নজদী (1) নারী (1) নিয়্যত (1) বাতিল ফির্কা (2) বায়আত গ্রহণ (3) মওদুদী মতবাদ (2) মক্কা মদিনার ফজিলত (1) মাক্বামে মাহমুদ (1) মাযহাব (13) মাযহাবের তাকলিদ (12) মাযার সম্পর্কিত (5) মিলাদুন্নবী (ﷺ) (1) মু'মিন (2) মুজরিয়া ফির্কা (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা ইমানদার (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বন্টনকারী (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেনজীর-বেমিসাল (1) লেখক ফোরাম (2) শবে বরাত (1) শানে আউলিয়া (20) শানে আহলে বাইয়াত (1) শানে মোস্তফা (ﷺ) (6) শানে সাহাবায়ে কেরাম (1) শাফায়াত (1) শিয়া (3) শিরিক (1) সদকায়ে জারিয়াহ (1) সালাত (7) সৌদি আরবের ইতিহাস (1) হক বাতিলের পরিচয় (2) হাদিস প্রচারে সতর্কতা (1)

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget