January 2019
২০ রাকাত তারাবিহ ৪ ইমামের জীবনী ৭৩ দল আমল আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা আসমাউন নবী (ﷺ) আহলুস-সুন্নাহ আহলে কুরআন ফির্কা ইনসান ইবনে তাইমিয়্যা ইমান ইলমে গায়েব ইসলামের ভিত্তি উসীলা এপ্সঃ আল আউলিয়া ওহাবী কবর ও মাযার জিয়ারত কিতাবঃ ৪০ হাদিস মুখস্ত রাখার ফজিলত কিতাবঃ আকাইদে আহলুস সুন্নাহ কিতাবঃ ইসলামের মূলধারা [মঈনুদ্দীন আশরাফী] কিতাবঃ উচ্চস্বরে জিকিরের বিধান [ইমাম সুয়ূতী] কিতাবঃ নবীগণ (আঃ) স্বশরীরে জীবিত - ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর [হাদ্দাদ দামেশকী] কিতাবঃ শাহ নেয়ামাতুল্লাহ (রহঃ)'র ভবিষ্যদ্বাণী কিতাবঃ সালাফীদের জবাবে কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ [ইকরাম উদ্দীন] কিতাবুল ফিতান কিয়াম ক্বদরিয়া ফির্কা খারেজী জামাতে ইসলামের ভ্রান্ত আকিদা জাহমীয়া ফির্কা তরিকত তাবলীগ দাজ্জাল দুরুদ দেওবন্দী আক্বিদা দোয়া কবুলের নিয়ম নজদী নারী নিয়্যত বাতিল ফির্কা বায়আত গ্রহণ মওদুদী মতবাদ মক্কা মদিনার ফজিলত মাক্বামে মাহমুদ মাযহাব মাযহাবের তাকলিদ মাযার সম্পর্কিত মিলাদুন্নবী (ﷺ) মু'মিন মুজরিয়া ফির্কা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা ইমানদার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বন্টনকারী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেনজীর-বেমিসাল লেখক ফোরাম শবে বরাত শানে আউলিয়া শানে আহলে বাইয়াত শানে মোস্তফা (ﷺ) শানে সাহাবায়ে কেরাম শাফায়াত শিয়া শিরিক সদকায়ে জারিয়াহ সালাত সৌদি আরবের ইতিহাস হক বাতিলের পরিচয় হাদিস প্রচারে সতর্কতা

• প্রশ্নঃ হুজূর, মাসিক ‘আদর্শ নারী’ (জানুয়ারি, সংখ্যা-১২৫) ম্যাগাজিনে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন ‘‘কোন আশা পূরণকে সামনে রেখে কোন ওলী আল্লাহর মাযারে গমন করা জায়েয হবে কি? উত্তরে বলা হয়েছে-

না, আশা ও মাকসূদ পূরণের উদ্দেশ্যে কোন পীর বা ওলী-বুযুর্গের কবর বা মাযারে গমন করা জায়িয হবে না। এককমাত্র যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এবং আখিরাতের স্মরণের লক্ষ্যেই কবর যিয়ারত করা জায়িয। কবর-মাযারে গিয়ে নিজের হাজত চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম ও মারাত্মক শির্‌ক গুনাহ্‌। বস্তুতঃ মাকসূদ বা আশা পূরণে একমাত্র মহান আল্লাহর নিকট চাইতে হবে, অন্য কারো কাছে নয়। সে জন্য মাযারে যাওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই। বরং নিজের ঘরে বা মসজিদে ইবাদত-বন্দেগী করে কিংবা সালাতুল হাজাত পড়ে মহান আল্লাহর নিকট নিজের হাজত পেশ করে দুজ্ঞআ করবে। [আহ্‌সানুল ফাতাওয়া, ১ম খণ্ড]

• এখন আমার প্রশ্ন ওই উত্তর কতটুকু গ্রহণীয়? যদি সঠিক না হয় তাহলে কোরআন-হাদীসের দলীলসহ উত্তর দিলে ধন্য হবো।

উত্তরঃ যে কোন বৈধ আশা ও মাকসূদ পূরণের উদ্দেশ্যে কোন হক্কানী কামিল পীর-মুর্শিদ বা ওলী-বুযর্গের মাযার শরীফে গমন করা এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রদত্ত বিশেষ রূহানী ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে মূলত সাহায্যের মূল উৎস হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌। আর সম্মানিত নবীগণ ও আল্লাহর পুণ্যাত্মা ওলীগণ হলেন ওই সাহায্যের বিকাশস্থল মাত্র। প্রকৃত মুসলমানগণ এ সহীহ আক্বীদা পোষণ করে থাকেন। সুতরাং আল্লাহর পুণ্যাত্মা বান্দাদের মাযারে গিয়ে নিজের হাজত প্রার্থনা করাকে ‘হারাম ও শির্‌ক’ বলা মুসলমানদের উপর জঘন্য অপবাদ এবং মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের সর্বজনমান্য মুহাদ্দিস হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহ্‌লভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘আশি‘আতুল লুমআত’ গ্রন্থে হযরত ইমাম গায্‌যালী রহমাতুল্লাহি আলাইহির উক্তি নকল করে বলেন, قَالَ الْاِمَامُ الْغَزَّالِی مَنْ یُّسْتَمَدُّ فِیْ حَیَاتِہٖ یُسْتَمَدُّ بَعْدَ وَفَاتِہٖ  ‘‘ইমাম গায্‌যালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, যাঁর কাছ থেকে জীবদ্দশায় সাহায্য চাওয়া যায়, তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা যাবে।’’ [আশইআতুল লুমআত, যিয়ারাতুল কুবূর অধ্যায়]

হযরত আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত জ্ঞতাফসীর-ই আযীযী, সূরা বাক্বারাহ্‌-এর আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘‘আল্লাহর সচরাচর কার্যাবলী যেমন, সন্তানদান, রুজি-রোজগার বৃদ্ধিকরণ, রোগমুক্তিদান ও এ ধরনের অন্য সব কার্যাবলীকে মুশরিকগণ দুষ্ট ও পাপী আত্মা এবং প্রতিমার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে থাকে, ফলে তারা কাফির বলে গণ্য হয়। আর মুসলমান এসব বিষয়কে আল্লাহর হুকুম বা তাঁর সৃষ্ট জীবের বিশেষত্বের ফলশ্রুতি বলে মনে করেন কিংবা তাঁর নেক বান্দাহ্‌গণের দুজ্ঞআ। আল্লাহর এ নেকবান্দাহ্‌গণ মহান রবের কাছে প্রার্থনা করে জনগণের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। এতে এই সব মুসলমানের ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না।’’ [তাফসীরে আযীযী, পৃষ্ঠা ৪৬০]

ফতোয়া-ই শামীতে ‘কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখ আছে যে, ‘‘ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, যখনই আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতাম তখনই ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারে চলে যেতাম, তাঁর বরকতেই আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যেত।’’

দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী স্বীয় ‘তারজমায়ে কোরআন’ সূরা ফাতিহায়  اِیَّاکَ نَسْتَعِیْنٌ আয়াতের প্রেক্ষাপটে লিখেছেন যে, ‘‘যদি কোন প্রিয়বান্দাকে রহমতে ইলাহীর মাধ্যম মনে করে তাঁকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগতভাবে সাহায্যকারী জ্ঞান না করে তাঁর কাছ থেকে বাহ্যিক সাহায্য ভিক্ষা করা হয়, তা হলে তা বৈধ। কেননা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া মূলতঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছ থেকেই সাহায্য প্রার্থনার নামান্তর ‘’

সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা কোন নবী বা ওলীকে আল্লাহ্ কিংবা্‌ আল্লাহর পুত্র জ্ঞান করে না। কেবল ‘ওসীলা বা মাধ্যম’ বলে বিশ্বাস করে। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা এবং তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সম্পূর্ণ জায়েয ও বরকতময়। তদুপরি সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘যদি তোমাদের ঘোড়া বা সাওয়ারি সফরে বা জঙ্গলে হারিয়ে যায়, অথবা কোন মুসীবতের শিকার হয়ে যাও আর সাহায্যপ্রার্থনা করার বাহ্যিকভাবে যদি কেউ পাওয়া না যায়, তবে তোমরা এ বলে সাহায্য প্রার্থণা কর اَعِیْنُوْنِیْ یَاعِبَادَ اللّٰہ অর্থাৎ, ‘‘হে আল্লাহর প্রিয়বান্দাগণ! আমাকে সাহায্য করুন’’ (তাবরানী শরীফ)। এই হাদীসে স্বয়ং রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের কঠিন মুহূর্তে মুসীবতের শিকার হলে আল্লাহর প্রিয় বন্ধুগণ থেকে সাহায্য চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহর রহমত, করুণা, কৃপা ও সাহায্য লাভ করার ওসীলা ও মাধ্যম হলেন আউলিয়া-ই কেরাম তথা আল্লাহর খাস বান্দাগণ। সুতরাং তাঁদের নিকট তাঁদেরকে ওসীলা মনে করে সাহায্য প্রার্থনা করা শির্‌ক নয় বরং প্রিয়নবীর পবিত্র হাদীস শরীফের উপর বাস্তব আমল। একে শির্‌ক ও হারাম ইত্যাদি বলা কোরআন ও হাদীস শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও আউলিয়া কেরামের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করার নামান্তর।

[তাবরানী শরীফ, তাফসীরে আযীযী ও আশিআতুল লুম’আত ইত্যাদি।] [সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ.৪০-৪১]

যাদের ভক্তিতে মুক্তি মিলে, আক্বিদা রক্ষায় বায়াতের তাৎপর্য ও সৎসঙ্গীর প্রভাব।
লেখকঃ (মাসুম বিল্লাহ সানি)

যাদের ভক্তিতে মিলে মুক্তিঃ
═══════════
মুক্তির অন্বেষণে কাদের ভক্তি জরুরি?

আল-কুরআনেই মিলেছে মুক্তির দিশা।
"হে আল্লাহ আমাদেরকে সরলপথ প্রদর্শন করুন। তাদেরই পথে যাদের উপর আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। 1

তাহলে নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দাগণ কারা? 

জবাব দিয়েছে স্বয়ং কালামুল্লাহ শরীফ।
"নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দাগণ হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ তথা আউলিয়ায়ে কেরামগণ।" 2

কাদের অনুসরণে মিলবে মুক্তির রাজটিকা?

"হে মুমিনগণ! তােমরা আনুগত্য কর আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও উলিল আমরের।" 3
"যে ব্যাক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে ব্যাক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করল, সে আল্লাহরই অবাধ্যাচরণ করল। 4
"হে রাসুল! আপনি বলে দিন - তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসা চাও, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন। 5

তাদের আনুগত্য ও ভালবাসায় কি ফায়দা?

"তুমি যাকে ভালােবাসঃ
তার সাথেই তুমি জান্নাতে থাকবে।" 6
তার সাথেই তোমার হাশর হবে।" 7

অতএব, সরল পথ কোনটা?

"এটাই আমার সরল পথ তােমরা এ পথের অনুসরণ কর।" 8

আক্বিদা রক্ষায় বায়াতের তাৎপর্যঃ
═══════════════

"তোমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উসীলা তালাশ করো।" 9
"প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমামের সাথে হাশরে আহ্বান করা হবে।" 10
"যারা রাসূলের এর হাতে বায়আত হয়েছে, আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর।" 11

উস্তাদ ব্যতীত কারো দৃষ্টান্ত এমন যে, কোন আজমীকে মরুর প্রান্তরে ছেড়ে দেয়া হল, আর সে দিকবেদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এক উদ্ভ্রান্তের ন্যায় এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রাপ্ত দৌঁড়ায় কিন্তু সঠিক কোন দিশা মিলে না।

"যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার গলায় বায়আতের বন্ধন রইল না। সে অজ্ঞতার (জাহেলী যুগের মত) মৃত্যুবরণ করলো।" 12

শয়তান তাকে যে কোন মুহূর্তে পথভ্রষ্ট করতে পারে।

"এক যামানা সোহবতে বা আউলিয়া,
বেহ্তের আযসাদ সালাহ তায়াতে বেরীয়া। "একটু সময় ক্বামেল অলীগণের মজলিসে বসা, রিয়াহীন হাজার বছরের নফল ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।" 13

"পাঞ্জেরী তব বিনা, দিশা না মিলায়;
ভবঘুরে জীবন মোর, ঘোর অমানিশায় !"
✍ [এম.বি.সানি]

আকিদা রক্ষায় সৎসঙ্গীর প্রভাবঃ
═══════════

বিখ্যাত কবি শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন,
'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ'।

তার বাস্তবতা প্রতিনিয়ত এই জগৎ সংসারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া অল্প বয়স্ক যুবকেরা পথভ্রষ্টদের কবলে পরে আকিদা ধ্বংস করে ইমান হারা হচ্ছে।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
"মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।" 14

"সৎ ও অসৎ বন্ধুর উদাহরণ হল, আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। আর কামার হয়তো তোমার দেহ বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে নয়তো তার কাছ থেকে খারাপ গন্ধ পাবে।" 15

তথ্যসূত্রঃ যাদের ভক্তিতে মুক্তি মিলে
════════════════

1.
সূরা ফাতিহা, ১:৫-৭।
2.
সূরা নিসা, ৬৯।
3.
[সূরা আন-নিসা, ৪:৫৯]

আনুগত্য সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতঃ

[সূরা আল-ইমরান ৩১]
[সূরা আন-নিসা, ৪:৮০]
[সূরা আন নুর ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৪]
[সূরা মুহাম্মদ,আয়াতঃ৩৩]
[সূরা আরাফ,আয়াতঃ৩]
[সূরা আনফাল,আয়াতঃ১, ২৪]
[আল আহযাব ২১, ৩৬]
[আশ-শুয়ারা ১০৮, ১১০, ১২৬, ১৪৪, ১৬৩, ১৭৯]
[সূরা ফাতহ ১০]

4. মানঃ (সহীহ)
১.সুনানে ইবনে মাজাহঃ হাদিস নাম্বারঃ 3
২.সহিহ বুখারী ২৯৫৭,
৩.সহিহ মুসলিম ১৮৩৫,
৪.সুনানে নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০,
৫.মুসনাদে আহমাদ ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৭৩৯, ১০২৫৯।

5.আল ইমরান ৩১

6.হযরত আনাস (রাঃ) সূত্রে।
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, ১৩:৯১, হাদিস নং : ৪৭৭৫।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৮৫, হাদিস নং : ৫০০৯।
গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ২৫:৩৪৭, হাদিস নং : ১২৩০১।
ঘ) মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ৩৩১ পৃষ্ঠা।

7.
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, ১৯:১৪৫, হাদিস নং : ৫৭০২।
খ) মুসলিম : আস্ সহীহ, ১৬:৯৫, হাদিস নং :৪৭৭৯।
গ) তিরমিযী : আস্ সুনান, ৮:৩৯৬, হাদিস নং : ২৩০৮।
ঘ) আবু দাউদ : আস সুনান, ১৩:৩৩২, হাদিস নং : ৪৪৬২।

8.সূরা আনআম, ১৫৪।

তথ্যসূত্র: সঠিকপথের দিশায় বায়াতের তাৎপর্যঃ
➖➖➖➖➖➖

9.সূরা আল-মায়িদা, ৫:৩৫
10.সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭১
11.সূরা আল-ফাতাহ, ৪৮:১০।

12.
১) ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ, বাবু ওজুবি মুলাজামাতি জামা'আতিল মুসলিমীন, ৯:৩৯৩, হাদিস নং : ৩৪৪১।
২) ইমাম খতিব তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইমারতি ওয়াল কৃঘাআ, ১ম পরিচ্ছেদ পৃ. ৩৩৬, হাদিস নং : ৩৬৭৪।
৩) ইমাম বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ৮:১৫৬।
৪) ইমাম ইবনে বাত্তা : আলি ইবনাতুল কুবরা, বাবু মান খলায় ইয়াদাহু মিন তা'আতি, ১:১৪৯, হাদিস নং : ১৪৪।
৫) ইমাম হাকেম : মুসতাদরাক আলাস্ সহীহাইন, বাবু ওয়া আম্মা হাদিসী আশ'আস ইবনে জাবের, ১:২৫০, হাদিস নং : ২৩৯।

13.
হযরত মাওলনা জালাল উদ্দিন রূমী (রহ.) এর বাণী: মসনবী শরীফ।

আকিদা রক্ষায় সৎসঙ্গীর প্রভাবঃ
➖➖➖➖

14.আবূ হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে।
(সনদ হাসান)
১.সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩।
২.আত-তিরমিযী: ২৩৭৮।

15.
১. সহিহ বুখারী: ২১০১।
২. সহিহ মুসলিম: ২৬২৮।

• প্রশ্নঃ   ইসলাম ধর্মে ঢোল, তবলা, হারমোনিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আউলিয়া-ই কিরামের শান বর্ণনা করা জায়েয আছে কি? জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

উত্তরঃ  ঢোল, তবলা ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্য- বাজনাসহকারে গান-বাজনা বা আউলিয়া-ই কিরামের শান মান বর্ণনা করা নাজায়েয, হারাম। যা হারাম হওয়া সম্পর্কে অধিকাংশ আলেমগণ ও আউলিয়া-ই কিরামের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। অধিকাংশ ফকীহ্‌গণের মতে বাদ্যবাজনা সহকারে কাওয়ালী ইত্যাদি পরিবেশন করা হারাম হওয়া সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাদ্যবাজনা সহকারে সামা মাহফিল বা কাওয়ালী চিশতিয়া তরীকায় বৈধ মর্মে যে বর্ণনা করা হয়, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও অপবাদ মাত্র। চিশতীয়া তরীকার অন্যতম বুযর্গ হযরত নেযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র ও খলীফা হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন যাররাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন মুর্শিদের নির্দেশে লিখিত সামা বিষয়ক কাশফুল ফানা আন উসূলিস সামা গ্রন্থে লিখেছেন যে, আমাদের তরীকার মাশাইখগণের সামা বাদ্যযন্ত্রের অপবাদ থেকে মুক্ত ছিল। স্বয়ং হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাদ্য যন্ত্রসহকারে সামা নাজায়েয হওয়া মর্মে তাঁর সিয়ারুল আউলিয়া গ্রন্থে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিখ্যাত ফিক্‌হ্‌ ও ফতোয়াগ্রন্থ দুর্‌রে মুখতার ৫ম খণ্ডে উল্লেখ আছে যে,
قال ابن مسعود صوت اللھو الغناء ینبت النفاق فی القلب کما ینبت الماء النبات وفی البزازیۃ استماع صوت الملاھی کالضرب علی قضب ونحوہ حرام لقولہٖ علیہ السلام استماع الملاھی معصیۃ والجلوس علیھا فسق والتلذذبھا کفر ای بالنعمۃ
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, গান-বাজনার শব্দ অন্তরে তেমনিভাবে কপটতা জন্ম দেয় যেমনিভাবে পানি উদ্ভিদকে জন্ম দেয়। ফতোয়া-ই বায্‌যাযিয়ায় উল্লেখ আছে, অনর্থক খেল-তামাশার শব্দ শ্রবণ করা যেমন, কাঠ বাজানো, অনুরূপভাবে অন্য কিছু বাজানো হারাম। কারণ, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, খেল-তামাশা শ্রবণ করা নাফরমানী। তাতে বসা ফাসিকী এবং তা উপভোগ করা নিয়ামতের কুফরীর নামান্তর। তবে, বিশিষ্ট ফিক্‌হ্‌বিদ আল্লামা মুফতী সৈয়দ আমীনুল হক ফরহাদাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যতম আলেমেদ্বীন আল্লামা আবদুস্‌ সালাম ঈসাপুরীসহ কিছু সংখ্যক উলামা-ই কিরাম উপরোক্ত অধিকাংশ ফকীহ্‌গণের মত ও দুর্‌রে মুখতারের উপরোক্ত অভিমতকে অশ্লীল গান-বাজনা ও অযথা খেল-তামাশা এবং বেহায়াপনার উপর প্রয়োগ করেছেন। তাঁরা আউলিয়া-ই কিরামের শান-মানে রচিত ভাল অর্থবোধক গজল এবং হাম্‌দ-নাত বাদ্যযন্ত্রসহকারে পবিত্র ও সুন্দর পরিবেশে বৈধ হওয়ার উপর মত ব্যক্ত করেছেন। 
অবশ্য সাধারণ মুসলমানের জন্য সাধারণ অবস্থায় অধিকাংশ ফকীহগণের অভিমতের উপর আমল করাই নিরাপদ, শ্রেয় ও অপরিহার্য। যাতে হিতে বিপরীত না হয়। সামা বৈধ হওয়ার পক্ষে মুহাক্কিক আলিমগণ বিভিন্ন শর্ত উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে প্রায় ওই শর্তসমূহ তোয়াক্কা করা হয় না বিধায় সামার মত একটি পবিত্র অনুষ্ঠান ঢং-তামাশায় পরিণত হয়ে আউলিয়া-ই কিরামের অনেক দরবার কলঙ্কিত ও আপত্তিকর পরিবেশে রূপান্তর হয়েছে এবং ওলীবিদ্বেষী কুচক্রীমহল নানামুখী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সুতরাং এ সব ব্যাপারে সকল ঈমানদার ও হক্কানী ওলীপ্রেমিক সুন্নী মুসলমানদের সুনজর অপরিহার্য। যেন ভন্ড, বে-শরাহ্‌, ফাসিক ও দুষ্টুচক্র সামা-কাওয়ালীর নামে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা সৃষ্টির সুযোগ না পায় এবং প্রকৃত আউলিয়া-ই কিরামের দরবারসমূহের পবিত্রতা রক্ষা পায়।

[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. নং 48-49]
মুফতি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, 
প্রধান মুফতি-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রকাশনায়ঃ- আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ), ৩২১ দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।

মহান প্রভু আল্লাহ্ তা’লার নামে আরম্ভ করছি। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের প্রতি জানাচ্ছি অসংখ্য সালাত ও সালাম। তাঁর খাঁটি ও নির্মল আহলে বায়ত (পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন), আসহাবে কেরাম (সম্মানিত সাথীবৃন্দ), আয্ওয়াজে মোতাহ্হারাত (পবিত্র বিবিগণ), সালাফে সালেহীন (পূর্ববর্তী বুযূর্গানে দ্বীন), মোতা’খেরীন (পরবর্তী যুগের পুণ্যবান জ্ঞান বিশারদবৃন্দ), বুযূর্গানে দ্বীন ও আউলিয়ায়ে কামেলীনের প্রতিও জানাচ্ছি আমাদের শত সহস্র সালাত-সালাম। বিশেষ করে আহলা দরবার শরীফের মহান আউলিয়ায়ে কেরাম, কুতুবে যমান হযরত কাজী আসাদ আলী সাহেব কেবলা (রহ:), হাজতে রওয়া, মুশকিল কোশা, সুলতানুল মোনাযেরীন হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী আবুল মোকারেম মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম সাহেব কেবলা (রহ:) এবং আমার পীর ও মুরশিদ হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ সেহাবউদ্দীন খালেদ সাহেব কেবলা (রহ:)-এর প্রতি আন্তরিক সালাম ও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে এ লেখার প্রয়াস পাচ্ছি।

সৃষ্টির আদিতে রাব্বুল আলামীন খোদাতা’লা ছিলেন রহস্যের গুপ্ত ভাণ্ডার। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে কুদসীতে তিনি এরশাদ ফরমান- “আমি ছিলাম রহস্যের গুপ্ত ভাণ্ডার। অতঃপর প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি মনস্থ করলাম।” তাঁর এ প্রকাশ হবার প্রক্রিয়ায় তিনি ধরণীর বুকে তাঁরই খলীফা বা প্রতিনিধি প্রেরণের সিদ্ধান্তটি পাক কালামে ঘোষণা করেছেন। এরশাদ হয়েছে-

”আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণকারী (সুরা বাকারা, ৩০ নং আয়াত)। আয়াতোল্লিখিত “প্রতিনিধি” শব্দটিকে তাফসীর গ্রন্থসমূহে আল্লাহ্ তা’লার নবী-রাসূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হযরত আদম (আ:) থেকে আরম্ভ করে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই মহান আল্লাহ পাকের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আমাদের মহানবী (দ:) যে আল্লাহ্ পাকের মূল খলীফা বা প্রতিনিধি তা অপর এক হাদীসে কুদসীতে প্রমাণিত হয়। আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ ফরমান- “হে রাসূল! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি আসমানসমূহ তথা বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না।” আমাদের উদ্ধৃত দুটো হাদীসে কুদসীতে প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ্ তা’লা বিশ্বনবী (দ:)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হতে চেয়েছিলেন।

মাধ্যম দ্বারাই আল্লাহ্ তা’লা নিজেকে প্রকাশ করে থাকেন। পৃথিবীতে যা কিছু বিরাজমান তার সবই কোনো না কোনো মাধ্যম দ্বারা জারি হয়েছে বা আছে।  বস্তুতঃ মহান স্রষ্টা এভাবেই সৃষ্টি প্রক্রিয়া জারি করেছিলেন এবং এখনো তা জারি আছে। আল্লাহ্ পাক কুরআন মজীদে এরশাদ ফরমান -

 “হে মু’মিন (বিশ্বাসী)-গণ! আল্লাহকে ভয় করো (অর্থাৎ, পরহেযগার হও তথা সওয়াবদায়ক আমল পালন করো এবং হারাম বর্জন করো) ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্যে ওসীলা বা মাধ্যম অন্বেষণ করো (সূরা মায়েদা, ৩৮ আয়াত)।

মওলানা সূফী আবদুল হাকিম আরওয়াছী তুর্কী (রহ:) তাঁর কৃত ’রাবেতায়ে শরীফা’ শীর্ষক পুস্তিকায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “ওসীলাটি যে প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ্ (দ:), তা সূরা আলে ইমরানের ৩৯ আয়াতে বর্ণিত ঐশী আদেশে জানানো হয়েছে -

’যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন’ (আল্ কুরআন)। ‘উলামায়ে হাক্কানী নবী (আ:)-গণের উত্তরাধিকারী’- হাদীসটি পরিস্ফুট করে যে আউলিয়াগণও ওসীলা” (রাবেতায়ে শরীফা)।

বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা’লার ফয়েয ও মারেফাত অত্যন্ত তাজাল্লীপূর্ণ, ঠিক আগুনের মতো। কেউ যদি রুটি বানিয়ে সরাসরি আগুনে দেয়. তাহলে তা পুড়ে যাবে। কিন্তু যদি সে রুটি সেকার জন্যে তাবা ব্যবহার করে, তাহলে রুটি পুড়বে না। ঠিক তেমনি আল্লাহ্ তা’লার ফয়েয ও মারেফত অন্তরে গ্রহণ করতে হলে একজন কামেল পীর-মুরশিদের প্রয়োজন যিনি তাঁর মুরীদের অন্তরকে আল্লাহ তা’লার নূরের তাজাল্লী সহ্য করার ও গ্রহণ করার সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করতে সক্ষম। মুরীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, এ ক্ষেত্রে তার পীরের সাথে আত্মিক যোগাযোগ বজায় রাখা এবং তা থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। অর্থাৎ, তাকে নিজ পীরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখতে হবে ও পূর্ণ আস্থাশীল হতে হবে।

কামেল (পূর্ণতাপ্রাপ্ত) পীরের কাছে বায়া’ত হওয়া অপরিহার্য। কেননা, সূরা মায়েদাতে ওসীলা গ্রহণের আয়াতটি আজ্ঞাসূচক। এক্ষণে বায়া’ত হবার বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা করবো। আরবী ‘বায়া’ত’ শব্দের অর্থ বিক্রি হয়ে যাওয়া। এর ব্যবহারিক অর্থ কোনো কামেল পীরের কাছে ইসলামী প্রথানুযায়ী মুরীদ হওয়া বা শিষ্যত্ব গ্রহণ করা। এই ইসলামী প্রথা মহানবী (দ:)-এর সময় থেকেই চালু হয়েছে। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-

”নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন ঈমানদারদের প্রতি যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার কাছে বায়া’ত গ্রহণ করছিলো (সূরা ফাতহ, ১৮ আয়াত)। একইভাবে সূরা ফাতহ ১০ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে -

”ওই সব মানুষ যারা আপনার কাছে বায়া’ত গ্রহণ করছে, তারা তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছেই বায়া’ত গ্রহণ করছে; তাদের হাতগুলোর ওপর রয়েছে আল্লাহ্ তা’লার কুদরতের হাত” (আল্ কুরআন)। বায়া’তের এই ইসলামী প্রথা মহানবী (দ:)-এর বেসাল তথা আল্লাহ্ তা’লার সাথে পরলোকে মিলিত হবার পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:), হযরত ওমর ফরুক (রা:), হযরত ওসমান যিন্নুরাইন (রা:) ও হযরত আলী (ক:) এবং তারও পরে তরীকতের পীর-মাশায়েখবৃন্দ জারি রাখেন। বায়া’ত কীভাবে গ্রহণ করা হতো তার বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (দ:) ঘোষণা করতেন: তোমরা আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দাও ও শপথ করো যে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, অবৈধ যৌনাচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, একে অপরের কুৎসা রটনা (গীবত) থেকে বিরত থাকবে, পাপাচার থেকে বিরত থাকবে; আর যে ব্যক্তি এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, তার জন্যে পুরস্কার সর্বশিক্তমান ও মহান আল্লাহর তরফ থেকে থাকবে।’ অতঃপর আমরা মহানবী (দ:)-এর কাছে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিতাম ও শপথ করতাম” (আল্ বুখারী ও মুসলিম)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) এ বিষয়ে বলেন: “আমরা যখন মহানবী (দ:)-এর কাছে (খোদায়ী আজ্ঞা) শোনার ও মানার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতাম, তখন তিনি বলতেন, ‘তোমাদের সাধ্যানুযায়ী’ (আল্ বুখারী ও মুসলিম)।

বায়া’তের ইসলামী প্রথা সম্পর্কে দেওবন্দী মৌলভী আবুল হাসান নদভীও তার ’রিজালুল ফিকর ওয়াদু দাওয়া’ পুস্তকের ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “সূফী তরীকার গাউস, হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ:), হযরত মুহিউদ্দীন ইবনে আরবী (রহ:) এবং নকশবন্দী সিলসিলার পীর-মাশায়েখবৃন্দ বায়া’তের দরজা যতোটুকু সম্ভব উম্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, যাতে করে প্রত্যেক সত্য ও একনিষ্ঠ বিশ্বাসী ব্যক্তি তাঁর জন্যে আত্মিকভাবে মূল্যবান কোনো বস্তু খুঁজে পান এবং সবাই যেন সর্বশক্তিমান ও মহান আল্লাহ্ তা’লার সাথে তাঁদের (পূর্ব) প্রতিশ্রুতির নবায়ন করতে পারেন। নকশবন্দী সিলসিলার এবং অন্যান্য সূফী তরীকার পীর-মাশায়েখবৃন্দ তাঁদের মুরীদদেরকে এমন এক সত্যবাদিতার মাকামে (পর্যায়ে) উন্নীত করেছিলেন, যেখানে তারা বায়া’তের দায়িত্ব উপলব্ধি ও অনুভব করতে পেরেছিলেন এবং নিজেদের বিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।”

• কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য

একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো তাঁকে আল্লাহ্ তা’লার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা (কুরবাত) ও রাসূলুল্লাহ্ (দ:)-এর নায়েব (প্রতিনিধি) হিসেবে দ্বীনের (ধর্মের) যাহেরী (প্রকাশ্য) এবং বাতেনী (আধ্যাত্মিক) জ্ঞানে একজন আলেম বা জ্ঞান বিশারদ হতে হবে। মোট কথা, ইসলামী জ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অগাধ জ্ঞান থাকতে হবে। তাঁকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কেও জানতে হবে। দ্বিতীয়তঃ তাঁকে আরেফ বা ভেদের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞানী হতে হবে।  তাঁর ইহ্সান অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যেমন মহানবী (দ:) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো, আর যদি না দেখতে পাও তবে এটি জানো যে তিনি তোমাকে দেখছেন” (আল হাদীস)। একজন আরেফ তাঁর অন্তরে সাক্ষ্য দেবেন যে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর যাত মোবারক, গুণাবলী ও কর্মে এক ও অনন্য। তৃতীয়তঃ কামেল পীর তাঁর পীরের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যেই পরিশুদ্ধ।  তাঁকে নফস তথা একগুঁয়ে সত্তার বিভিন্ন স্তর বা পর্যায়, রোগ ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে হবে। শয়তান কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে কলব্ বা অন্তরে প্রবেশ করতে পারে তাও তাঁকে জানতে হবে। তাঁর মুরীদদের পরিশুদ্ধ করা এবং কামেলিয়াত বা পূর্ণতার পর্যায়ে উন্নীত করার সকল পদ্ধতিও তাঁর জানা থাকা প্রয়োজন। চতুর্থতঃ তরীকতের পথে অনুসারীদের পথ দেখানোর ক্ষেত্রে একজন কামেল পীরের প্রয়োজন তাঁর পীর কেবলার এজাযত বা অনুমতি। বস্তুতঃ একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য ও গুণ হলো তাঁকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হবে, তাঁর কথাবার্তা শুনলে ঈমান সজীব ও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

MKRdezign

TAGS

২০ রাকাত তারাবিহ (1) ৪ ইমামের জীবনী (4) ৭৩ দল (1) আমল (2) আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা (2) আসমাউন নবী (ﷺ) (1) আহলুস-সুন্নাহ (2) আহলে কুরআন ফির্কা (1) ইনসান (1) ইবনে তাইমিয়্যা (1) ইমান (3) ইলমে গায়েব (1) ইসলামের ভিত্তি (1) উসীলা (8) এপ্সঃ আল আউলিয়া (54) ওহাবী (3) কবর ও মাযার জিয়ারত (2) কিতাবঃ ৪০ হাদিস মুখস্ত রাখার ফজিলত (41) কিতাবঃ আকাইদে আহলুস সুন্নাহ (7) কিতাবঃ ইসলামের মূলধারা [মঈনুদ্দীন আশরাফী] (21) কিতাবঃ উচ্চস্বরে জিকিরের বিধান [ইমাম সুয়ূতী] (2) কিতাবঃ নবীগণ (আঃ) স্বশরীরে জীবিত - ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) (4) কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান (16) কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর [হাদ্দাদ দামেশকী] (1) কিতাবঃ শাহ নেয়ামাতুল্লাহ (রহঃ)'র ভবিষ্যদ্বাণী (1) কিতাবঃ সালাফীদের জবাবে কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ [ইকরাম উদ্দীন] (14) কিতাবুল ফিতান (1) কিয়াম (1) ক্বদরিয়া ফির্কা (1) খারেজী (3) জামাতে ইসলামের ভ্রান্ত আকিদা (2) জাহমীয়া ফির্কা (1) তরিকত (1) তাবলীগ (2) দাজ্জাল (1) দুরুদ (1) দেওবন্দী আক্বিদা (1) দোয়া কবুলের নিয়ম (1) নজদী (1) নারী (1) নিয়্যত (1) বাতিল ফির্কা (2) বায়আত গ্রহণ (3) মওদুদী মতবাদ (2) মক্কা মদিনার ফজিলত (1) মাক্বামে মাহমুদ (1) মাযহাব (13) মাযহাবের তাকলিদ (12) মাযার সম্পর্কিত (5) মিলাদুন্নবী (ﷺ) (1) মু'মিন (2) মুজরিয়া ফির্কা (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা ইমানদার (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বন্টনকারী (1) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেনজীর-বেমিসাল (1) লেখক ফোরাম (2) শবে বরাত (1) শানে আউলিয়া (20) শানে আহলে বাইয়াত (1) শানে মোস্তফা (ﷺ) (6) শানে সাহাবায়ে কেরাম (1) শাফায়াত (1) শিয়া (3) শিরিক (1) সদকায়ে জারিয়াহ (1) সালাত (7) সৌদি আরবের ইতিহাস (1) হক বাতিলের পরিচয় (2) হাদিস প্রচারে সতর্কতা (1)

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget